৫৫ বছর পর আবার মানুষ যাচ্ছে চাঁদে
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
৫৫ বছর পর আবার মানুষ যাচ্ছে চাঁদে — ২০২৭ সালে নাসার আর্টেমিস মিশন প্রস্তুত চূড়ান্ত পর্যায়ে
টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০০
মানবজাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই—যেদিন প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদের মাটিতে পা রাখে। প্রায় ৫৫ বছর পর আবারও সেই স্বপ্ন ফিরিয়ে আনছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
সবকিছু পরিকল্পনামতো এগোলে ২০২৭ সালে আবার মানুষ পা রাখবে চাঁদের বুকে। একইসঙ্গে চীনও ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আর্টেমিস মিশন: নতুন যুগের চন্দ্রযাত্রা
নাসার মহাকাশ কর্মসূচি ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’ হলো অ্যাপোলো যুগের পর মানুষের চাঁদে ফেরার সর্ববৃহৎ উদ্যোগ।
এই প্রোগ্রামের তিন ধাপের মধ্যে ‘আর্টেমিস ১’ (২০২২) ছিল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট।
‘আর্টেমিস ২’ মিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার নভোচারী নিয়ে চাঁদের কক্ষপথে যাবে।
আর তার পরেই আসবে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ‘আর্টেমিস ৩’ — ২০২৭ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে মানুষ।
নাসার উপপ্রশাসক লেকিশা হকিন্স বলেন,
“আর্টেমিস মিশনের লক্ষ্য শুধু চাঁদে ফেরা নয়, বরং সেখানে মানুষের স্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে মঙ্গল অভিযানের পথও সুগম করবে।”
চার নভোচারীর ঐতিহাসিক যাত্রা
চাঁদের কক্ষপথে যাত্রা করবেন চার নভোচারী —
-
রিড ওয়াইজম্যান (কমান্ডার)
-
ভিক্টর গ্লোভার (পাইলট)
-
ক্রিস্টিনা হ্যামক কোচ (মিশন স্পেশালিস্ট)
-
জেরেমি হ্যানসেন (কানাডিয়ান নভোচারী)
এই চার নভোচারী প্রায় ১২ লাখ মাইল ভ্রমণ করবেন। তারা পৃথিবী থেকে আগের যেকোনো মানুষের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দূরত্বে পৌঁছাবেন।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু: নতুন গন্তব্য
আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা হবে—যেখানে আগে কখনও মানুষ পা রাখেনি।
এ অঞ্চল স্থায়ীভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং সেখানে বরফ ও পানি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই মিশনের ১৩টি সম্ভাব্য অবতরণ স্থানের মধ্যে রয়েছে হাওর্থ, নোবিল রিম, ম্যালাপার্ট ম্যাসিফ ও মন্স মাউটন প্রভৃতি অঞ্চল।
নাসা জানিয়েছে, এখানকার পাথুরে ভূখণ্ড থেকে চন্দ্র সম্পদ ও সৌরজগতের ইতিহাস সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি ও মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি
নাসা ‘আর্টেমিস ৪’ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে একটি মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে।
এটি ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে নভোচারী পাঠানোর প্রযুক্তিগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও প্রতিযোগিতা
আর্টেমিস ২-এর ওরিয়ন সার্ভিস মডিউল তৈরি করেছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA)।
তবে মিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেট, যা চাঁদে অবতরণের জন্য ব্যবহার করা হবে।
ইতিমধ্যে এটি পরীক্ষামূলকভাবে সফল ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে, যদিও একাধিকবার ব্যর্থতাও ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চন্দ্রযাত্রা নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা।
চীন ২০৩০ সালের মধ্যেই নিজের নভোচারী চাঁদে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চাঁদে আগ্রহের কারণ
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে রয়েছে বিরল খনিজ ও বরফের স্তর, যা ভবিষ্যতে রকেট জ্বালানি তৈরি এবং চন্দ্র বসতি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই সম্ভাবনাই বিশ্বের মহাকাশশক্তিগুলোর মধ্যে নতুন ‘চাঁদ দৌড়’ শুরু করেছে।
কোন মন্তব্য নেই