বিদায় আর্জেন্টিনার - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বিদায় আর্জেন্টিনার



দশ মিনিটের ছোট্ট এক ফরাসি টর্নেডো। তাতেই লন্ডভন্ড আর্জেন্টিনা রক্ষণ। লন্ডভন্ড সময়ের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ স্বপ্নও। এমবাপে-গ্রিজম্যানদের তোপে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে উড়ে গেছে আর্জেন্টিনা। জোড়া করেছেন কিলিয়ান এমবাপে।
এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচও হয়ত এটি। গোল আর পাল্টা গোলের ম্যাচে ৫৭ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্দের গোলে ফ্রান্সের সমতায় ফেরা, এরপর চার মিনিটের এমবাপে ঝলক। ফাঁকা রক্ষণের সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৪-২ করে দেন ১৯ বছর বয়সী তারকা। বাকি সময়ে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক বনে যাওয়া ফরাসি রক্ষণের পাশে মেসি-ডি মারিয়াদের নিষ্প্রভ ঘুরে বেড়ানো। এর মাঝে মেসির দলকে সইতে হয়েছে পাল্টা আক্রমণের ঝটকাও। আর যোগ করা সময়ে মেসির ক্রস থেকে করা বদলি খেলোয়াড় আগুয়েরোর হারের ব্যবধানই কমানো গোল। ম্যাচজুড়ে ফরাসিদের পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে পাঁচজনকে দেখতে হয়েছে হলুদ কার্ড। আর্জেন্টিনার পোস্টে মোট চারটি শট নেয় ফ্রান্স, চারটিই সফল। এই ছিল গতকাল কাজান অ্যারেনার সংক্ষিপ্ত চিত্র।





১০৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও কোচ হিসেবে রেকর্ড ৮০তম ম্যাচে এবারই প্রথম আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হন দিদিয়ের দেশম। প্রথম সাক্ষাতেই ইতিহাস। ইতিহাসই তো, বিশ্বকাপে যে এই প্রথম আর্জেন্টিনাকে হারালো ফ্রান্স।
স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। ফল স্বরুপ বলের দখল রাখলেও ঘুমপাড়ানি ফুটবলে প্রথম ৪০ মিনিট প্রতিপক্ষের পোস্টে কোন শটই নিতে পারেননি মেসি-ডি মারিয়া-পাভনে গড়া হোর্হে সাম্পাওলির আক্রমণভাগ। বিশেষ করে একজন স্ট্রাইকারের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পায় আর্জেন্টিনা। হিগুয়েইন-আগুয়েরো তখন বেঞ্চে।
পক্ষান্তরে পাল্টা আক্রমণে ত্রাস ছড়ান এমবাপে-গ্রিজম্যান-জিরুদরা। তেমনি এক ভয়ঙ্কর পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের ১২তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় ফ্রান্স।

বল নিয়ে দ্রæতগতিতে এগুচ্ছিলেন কিলিয়ান একমাপে। ডি বক্সে তাকে অবৈধভাবে বাধা দেন মার্কোস রোহো। এজন্য হলুদ কার্ডও দেখতে হয় রোহোকে। গোলের এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি অঁতোয়ান গ্রিজম্যান।
২০তম মিনিটে লম্বা পাসে বল পেয়ে একই রকম ভয়ঙ্করভাবে আর্জেন্টিনার ডি বক্সের দিকে এগুচ্ছিলেন এমবাপে। এ যাত্রায় হলুদ কার্ডের বিনিময়ে পিএসজি তারকাকে থামান তাগলিফিকো। ডি বক্সের ঠিক বাইরে থেকে নেয়া পল পগবার ফ্রি-কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। ৩৯তম মিনিটে গ্রিজম্যানের ক্রসে বেঞ্জামিন পাভার্দ মাথা লাগাতে পারলে ব্যবধান বাড়াতে পারত ফ্রান্স।
এর দুই মিনিট পর সম্ভবত আসরের দর্শনীয় গোলটি করেন ডি মারিয়া। যে গোলে সমতায় ফেরে আর্জেন্টিনা। এভার বনেগার পাস ধরে ২৫ গজ দুর থেকে বাঁ-পায়ে নেয়া ডি মারিয়ার আচমকা শট ঠেকানোর কোন সুযোগই পাননি গোলরক্ষক হুগো লরিস। ডান কোনা ঘেঁসে বল আশ্রয় নেয় জালে। আকাশি-নীল গ্যালারীতে ওঠে উল্লাসের ঢেউ। যে উল্লাসের একজন ছিলেন দেশটির কিংবদন্তি ডিয়াগো ম্যারাডোনা। ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যিনি এদিনও গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন প্রাণের দলকে সমর্থন দিতে। বিশ্বকাপে ৩২ বছর পর ডি বক্সের বাইরের শটে গোল খায় ফ্রান্স।
দ্বিতীয়ার্ধের রোহোর বদলি নামেন ফেদেরিকো ফাজিও। বিরতির পর তৃতীয় মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির নেয়া শট গ্যাব্রিয়েল মার্কাদোর পা ছুঁয়ে জালে আশ্রয় নেয়। আকাশি-নীল গ্যালারীতে ওঠে উল্লাসের ঢেউ।

দশ মিনিট না পেরুতেই সেই ঢেউ থামিয়ে দেন পাভার্দ। দুরপাল্লার বাঁকানো ভলিতে স্কোরবোর্ডে সমতা আনেন ২২ বছর বয়সী তরুণ ডিফেন্ডার। এর ছয় মিনিট পর কাজান অ্যারেনার আকাশী-সাদা দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয়া এমবাপের সেই গোল। ভিড়ের মধ্য থেকে বল বের করে বাম প্রান্ত থেকে জোরালো শটে গোলরক্ষক আরমানিকে পরাস্থ করেন তিনি। চার মিনিট পর করেন বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় গোল।
তাতেই শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন। সেই সাথে জন্ম নেয় বেশ কয়েকটি প্রশ্নও। আন্তর্জাতিক ফুটবলে থাকছেন তো মেসি? আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে সাম্পাওলির ভবিষ্যৎ-ই বা কি?




সূত্র

1 টি মন্তব্য: