বি. চৌধুরী বাদ, বিএনপিকে নিয়ে কামালের নতুন জোট - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বি. চৌধুরী বাদ, বিএনপিকে নিয়ে কামালের নতুন জোট



সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট গঠিত হয়েছে।

একাদশ সংসদ নিবার্চনের আগে জোট গঠনের প্রক্রিয়া এবং তা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে এই জোটের ঘোষণা আসে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তা কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ঘোষণা পড়ে শোনান মান্না, যিনি বি চৌধুরী নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টেরও সদস্যসচিব।

দিনভর টানাপড়েনের পর যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি বি চৌধুরী ছিলেন না এই সংবাদ সম্মেলনে, যিনি গত কয়েক মাস ধরে কামালের সঙ্গে জোট বাধার প্রক্রিয়ায় ছিলেন।

পূবর্ নিধাির্রত সময় অনুযায়ী গতকাল বিকালে ড. কামালের বাড়ি গিয়ে তাকে না পেয়ে ফিরে বি চৌধুরীর বাড়িতে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য প্রক্রিয়া বিনষ্টের জন্য গণফোরাম সভাপতিকেই দায়ী করা হয়।

বি চৌধুরীসহ বিকল্প ধারার নেতারা যখন বেইলি রোডে ড. কামালের বাড়ির ফটকে ছিলেন, তখন মতিঝিলে নিজের পেশাগত চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে বৈঠকে ছিলেন কামাল।

বাড়ির ফটকে থেকে ফেরার সময় বিকল্প ধারার মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই ঐক্যটা না হওয়ার পেছনে কাদের ষড়যন্ত্র আছে, এটা আজ জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল।’

জাতীয় প্রেসক্লাবে কামাল, মান্না, রবদের সংবাদ সম্মেলনের আধা ঘণ্টার মধ্যে বি চৌধুরীর বাড়িতে আরেক সংবাদ সম্মেলনে মাহি বলেন, ঐক্যের জন্য তারা অনেক ছাড় দিলেও বারবার বাধা পেয়েছেন তারা।

ঐক্য গঠনের প্রতিটি পদে তাদের সঙ্গে লুকোচুরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মাহি।

গত বছরের এপ্রিল মাসে বি চৌধুরীর বিকল্প ধারা, রবের জেএসডি ও মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। বি চৌধুরী হন জোটের চেয়ারম্যান, মান্না হন সদস্যসচিব। শুরুতে আবদুল কাদের সিদ্দিকী এই জোটে থাকলেও পরে সরে যান।

অন্যদিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি প্ল্যাটফমর্ গঠন করেন, যার সদস্যসচিব হন আ ব ম মোস্তফা আমীন।

দশম সংসদ নিবার্চন বিএনপি বজের্নর পর বি চৌধুরী যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের কামালও ওই নিবার্চনে অংশ নেননি।

একাদশ সংসদ নিবার্চনের কয়েক মাস আগে সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিবার্চন এবং ইসি পুনগর্ঠনের ৫ দফা দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন চালাতে একমত হন বি চৌধুরী ও কামাল।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর একযোগে আন্দোলনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাবেক এই দুই নেতা। এরপর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকটি কমর্সূচিও একসঙ্গে পালন করেন তারা। ৭ দফা দাবি তোলা বিএনপির নেতারাও একটি কমর্সূচিতে যোগ দেন।

এরপর বিএনপির জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যোগ দেয়ার বিষয়টি আসে আলোচনায়। তখন একপযাের্য় জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে আসার শতর্ বিএনপিকে দেয় বি চৌধুরীর দল বিকল্প ধারা।

জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির কোনো স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যেই ঐক্য প্রক্রিয়ার রূপরেখা চ‚ড়ান্ত করতে শনিবার বিকালে কামাল হোসেনের বাড়িতে বৈঠকের সময় ঠিক হয়। এই বৈঠকে বসার কথা ছিল যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও বিএনপি নেতাদের।

বৈঠকে যোগ দিতে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বি চৌধুরী বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় যান ছেলে মাহি বি চৌধুরীকে নিয়ে। কিন্তু বাড়ির দরজা বন্ধ দেখে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে থেকে ফিরে যান তারা।

মাহি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাসায় দাওয়াত দিয়ে গেট খোলার কেউ নেই! একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে এভাবে ডেকে এ রকম ব্যবহার কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব।’

এদিকে তখন মতিঝিলে নিজের চেম্বারে ফখরুল, রব, মান্নাকে নিয়ে কামালের বৈঠকের পর তারা জানান, সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা এর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এই ‘জগাখিচুড়ি ঐক্য’ টিকবে না।

প্রক্রিয়া শুরুর মাস না গড়াতেই বি চৌধুরী ও কামালের সম্পকের্র এই ফাটল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিকতাই তুলে ধরল।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের 

৭ দফা দাবিগুলো হলো

১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

২. নিবার্চন কমিশনের পুনগর্ঠন ও নিবার্চনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

৩. বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

৪. কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, সামাজিক গণমাধ্যমে মতপ্রকাশের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

৫. নিবার্চনের ১০ দিন আগে থেকে নিবার্চনের পর সরকার গঠন পযর্ন্ত বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূণর্ ক্ষমতা নিবার্চন কমিশনকে দেয়া।

৬. নিবার্চনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তজাির্তক পযের্বক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূণর্ নিবার্চন প্রক্রিয়া পযের্বক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা এবং গণমাধ্যমকমীের্দর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা।

 


৭. তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নিবার্চনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত না হওয়া পযর্ন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা এবং নতুন কোনো মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া।

বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ১১টি লক্ষ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।

লক্ষ্যগুলো হলো

১. মুক্তিসংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নিবার্হী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

২. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূণর্ পদে নিদর্লীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ-যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।

৩. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা।

৪. দুনীির্ত দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুনীির্তমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পযাের্য় দুনীির্ত কঠোর হাতে দমন ও দুনীির্তর দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।

৫. বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পযাের্য় নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।

৬. জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অথার্য়নে সুনিশ্চিত করা।

৭. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুনীির্ত ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।

৮. বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আথির্ক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা, সম্পদের সবোর্চ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

 



৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কাযর্কর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।

১০. ‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’Ñ এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।

১১. প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই