ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে বাঁচান - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে বাঁচান





আপনারা ডোজ কতটুকু দেবেন। পরিমাণ বাড়াবেন, না কমাবেন। ওষুধ দুইবার ছিটাবেন না চারবার ছিটাবেন- এটা আপনাদের ব্যাপার। আমরা চাই মশা মরুক। আপনারা আমাদের ডেঙ্গু থেকে বাঁচান। গতকাল দুপুরে ডিসিসি’র আইনজীবীরা ডোজ   বাড়িয়ে চারদিন এডিশ মশার ওষুধ ছিটানোর অনুমতি চাইলে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্ত্রব্য করেন। এরপর আদালত তাদের আবেদনে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সময় দেন। একইসঙ্গে ওই দিন মশা নিধনের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
এ দিন আদালতে ঢাকা উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম ও ঢাকা দক্ষিণের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এডভোকেট এম.সাঈদ আহমদ (রাজা)। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। আদালতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত। 

দুপুরে শুনানিতে সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, মশা নিধনের জন্য আমাদের কিছু দিনের সময় দিন। এ সময়ের মধ্যে আমাদের কাছে থাকা বর্তমান ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে মশা নিধনের চেষ্টা করবো। এরপর আপনারা পরবর্তী আদেশ দেবেন। মশা নিধনে বিদেশ থেকে ওষুধ আনতে এক মাসের মতো সময় প্রয়োজন বলে আদালতকে জানানো হয়। মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন-এর পক্ষ থেকে সমন্বিত ক্রাশ অভিযান চালাবেন বলে তারা আদালতকে জানান। একপর্যায়ে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবী এম. সাঈদ আহমদ (রাজা) হাইকোর্টকে বলেন, যে ওষুধ এখন ছিটানো হয় এটা অকার্যকর নয়, তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের  প্রেক্ষাপটে এখন এডিস মশারা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে গেছে। তাই ওষুধ ছিটানোর ডোজ বাড়ালে এই ওষুধেই মশা মরবে। তিনি হাইকোর্টকে বলেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে, রোববার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মশা মারার ওষুধ ছিটানো হলো, সোমবার আবার উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ওষুধ ছিটানো হলো। যেহেতু এখানে বায়ু জনিত বিষয় জড়িত ।

তাই হয়তো মশার ওষুধ কার্যকর ফল দিচ্ছে না। তখন আদালত বলেন, এটা একটা কথা হলো? সদরঘাটের মশা কি তাহলে উড়ে উত্তরা চলে যায়? এরপর এ বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে এ আইনজীবী বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে ওষুধ ছিটানোর ডোজ বাড়িয়ে একই দিনে ওষুধ ছিটালে এই ওষুধেই হয়তো কাজ হবে। ডোজ বাড়াতে হবে, কারণ মশারা এখন ফিনাইল, হারপিক ও বিটুমিনের পানি খেয়ে ফেলে। তাই আমরা ওষুধ ছিটানোর ডোজ বাড়িয়ে দিনে ৪ বার কিংবা প্রয়োজনে ৬ বার ওষুধ দিয়ে দেখতে চাই। এতে মনে হয় কাজ হবে। কারণ এই একই ওষুধ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় দিনে ৫-৬ বার ছিটানো হয় এবং ওখানে মশা নেই। এসময় আদালত দক্ষিণ সিটির আইনজীবীকে বলেন, আপনারা দিনে ৩ বার স্প্রে করুন বা ৬ বার স্প্রে করুন সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা চাই মশা মরুক। আমরা চাই, আপনারা দ্রুত ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে বাঁচান। এ সময় দুই আইনজীবীর কথা শুনে বিচারক উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা বলছে মশার ওষুধ কাজ করছে না। অথচ সিটি করপোরেশন বলছে কার্যকর। সরকার বক্তব্য দিচ্ছে একটা, আর সিটি করপোরেশন বক্তব্য দিচ্ছে আরেকটা!


এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আদালতে হাজির হন। হাজির হয়ে তাদের বক্তব্য দিলে তা শোনেন আদালত। এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর অ্যালার্মিং সিচ্যুয়েশন কেন হল? এক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা কি চিহ্নিত করা হয়েছে? জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনই বলুক, সেটাই ভালো হয়। 

এরপর ঢাকা দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ বলেন, আমার এই সিটি করপোরেশনে এক কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯। তখন আদালত জানতে চান, এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন? জবাবে শরীফ আহমদ বিশ্বের বিভিন্ন  দেশে  ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। এরপর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তাদের আমদানিকৃত ওষুধ দু’টি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। উভয় ল্যাব পরীক্ষায় ওষুধ সঠিক আছে বলে প্রমাণিত হয়। তাদের এ কথার জবাবে আদালত বলেন, আপনারা কি নিজেরা পরিক্ষা করেছেন ? জবাবে বলেন, হ্যা, করেছি। সেখানেও সন্তোষ জনক হয়েছে। তৃতীয় আরেকটি ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি।

সেটা হয়ত আগামী রোববার পাব। সেটা হাতে এলেই আদালতকে আবারও অবহিত করবেন তারা। কিন্তু ওষুধ তো কোনো কাজ করছে না। আর পরীক্ষা করে কি লাভ ? হয়ত আপনাদের আমদানিকৃত স্যাম্পল ওষুধ ভালো থাকে। এরপর পিছন দিয়ে ২ নম্বর ওষুধ দিয়ে দেয়। তা না হলে ওষুধ কাজ করছে না কেন? হাসপাতালগুলি ডেঙ্গু রোগীতে ভর্তি। সবাইতো হাসপাতালে যায় না। গেলে কি অবস্থা হবে?  নগরবাসীর ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। এভাবে হয় না। আপনারা বিদেশ থেকে নতুন ওষুধ আনেন। নতুন করে কিভাবে এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো ওষুধ আনা যায় সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে দুপুরের মধ্যে অবহিত করার নির্দেশ দেন আদালত। 


আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে জানিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যগত যে কোন বিষয় মহামারীতে রুপ নিলে তা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। এটাতো এখন মহামারির মতোই। তাই তাদেরকেও এখানে অন্তর্ভূক্ত করা হোক। তখন আদালত বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাড়া  দেশের স্বাস্থ্য  দেখবে। এগুলো আমরা  দেখতে চাই না। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে, এটা কেবল সিটি কর্পোরেশনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৪ই জুলাই এডিস মশা নির্মূল ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ একই ধরনের অন্যান্য রোগের বিস্তার রোধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। আদালতের আদেশ স্বত্ত্বেও এডিস মশা নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ২২শে জুলাই দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদ্বয়কে তলব করেন হাইকোর্ট। ওই তলবের প্রেক্ষিতে গতকাল তারা হাজির হন। 


কোন মন্তব্য নেই