হেঁচকি থামাতে করনীয় কি?
![]() |
| হেঁচকি থামাতে করনীয় কি? |
খাবার
খাওয়ার সময়, গুরুত্বপূর্ণ কোনো
কাজের মধ্যে অথবা অবসর
কাটানোর সময় হঠাৎ হেঁচকির
প্রকোপ শুরু হওয়াটা খুব
সাধারণ একটি বিষয়।
এমনকি
কোনো কারণ ছাড়াই যখন
তখন মানুষের হেঁচকি শুরু হলে
তা নিয়ে অবাক হওয়ার
কিছু নেই।
বিশেষজ্ঞদের
মতে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণেই মানুষের হেঁচকি
আসে।
মানুষের
হেঁচকি আসে কেন?
বিজ্ঞানীরা
শত শত বছর ধরে
আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন এই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার
সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা
করেছেন।
হেঁচকির
সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয় যার
ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ
করে। তখন
ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ
হয়ে 'হিক' শব্দ তৈরি
হয়।
ফুসফুসের
নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর,
যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, হঠাৎ সংকোচনের
ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।
হেঁচকি
ওঠার একশো'র বেশি
মেডিক্যাল কারণ থাকতে পারে,
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো খুবই সামান্য
কারণেই হয়ে থাকে।
ওষুধ
নির্মাতা সংস্থা অ্যাকমে'র
সিনিয়র ম্যানেজার ও চিকিৎসক আফরোজা
আখতার বলেন, "হেঁচকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ দ্রুত
খাবার গ্রহণ করা।"
দ্রুত
খাওয়ার কারণে খাবারের সাথে
সাথে পেটের ভেতর বাতাস
প্রবেশ করার কারণে 'ভ্যাগাস'
নার্ভের কার্যকলাপ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে হেঁচকি
তৈরি হয়।
চেতনানাশক,
উত্তেজনাবর্ধক, পার্কিনসন্স রোগ বা কেমোথেরাপির
বিভিন্ন ধরণের ওষুধ নেয়ার
ফলেও হেঁচকি তৈরি হতে
পারে।
এছাড়া
কিছু অসুখের ক্ষেত্রেও মানুষের
হেঁচকি হতে পারে।
মিজ.
আখতার বলেন, "কিডনি ফেল করলে,
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস বা মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রেও
অনেকের হেঁচকি তৈরি হতে
পারে।"
কিন্তু
অধিকাংশ সময়ই হেঁচকি শুরু
হওয়ার জন্য এসব কোনো
কারণেরই দরকার হয় না।
হাসি
বা কাশির মধ্যে, অতিরিক্ত
মদ্যপান, অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করা
বা ঝাঁঝসহ পানীয় বেশি
পরিমাণে খেলে হেঁচকি শুরু
হতে পারে, তবে কোনো
ধরণের কারণ ছাড়াও হেঁচকি
আসাটা একেবারেই অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
হেঁচকি
ওঠাটা খুবই স্বাভাবিক একটি
ঘটনা এবং সাধারণত মিনিটখানেকের
মধ্যেই তা স্বাভাবিক পর্যায়ে
পৌঁছে যায়। তবে
অতিরিক্ত মাত্রায় হেঁচকির উদাহরণও কিন্তু রয়েছে।
যেমন
সবচেয়ে বেশি সময় ধরে
হেঁচকি ওঠার বিশ্ব রেকর্ডের
উদাহরণ হিসেবে মনে করা
হয় যুক্তরাষ্ট্রের চার্লস অসবোর্নের ঘটনাকে।
১৯২২
সালে হেঁচকি তোলা শুরু
করেন তিনি, কথিত আছে
সেসময় তিনি একটি শূকর
ওজন করার চেষ্টা করছিলেন। মি.
অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান
১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে - মোট
৬৮ বছর পর।
হেঁচকি
থামানোর উপায়
ঘরোয়াভাবে
হেঁচকি থামানোর প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে মূলত দুইটি মূলনীতি
অনুসরণ করা হয়।
একটি
হলো রক্তে কার্বন ডাই
অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া
যেন শ্বাসনালীতে খিঁচুনি বন্ধ হয়।
আরেকটি
হলো শ্বাসপ্রশ্বাস ও গলধকরণের মধ্যে
সমন্বয় সাধন করা 'ভ্যাগাস'
স্নায়ুকে উদ্দীপ্ত করা।
যুক্তরাজ্যের
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটের
তথ্য অনুযায়ী কয়েকটি পদ্ধতিতে হেঁচকি থামানো যায়।
Ø
কাগজের
ব্যাগে নিশ্বাস ফেলা (ব্যাগ মাথা
দিয়ে ঢুকাবেন না)
Ø
দুই
হাঁটু বুক পর্যন্ত টেনে
ধরে সামনের দিকে ঝুঁকে
পড়া
Ø
বরফ
ঠাণ্ডা পানি খাওয়া
Ø
কিছু
দানাদার চিনি খাওয়া
Ø
লেবুতে
কামড় দেয়া বা একটু
ভিনেগারের স্বাদ নেয়া
Ø
স্বল্প
সময়ের জন্য দম বন্ধ
করে রাখা
কখন
চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে
হেঁচকি
সাধারণত আপনা থেকেই ভাল
হয়ে যায়, তবে যদি
অতি দীর্ঘসময় ধরে হেঁচকি উঠতে
থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ
নেয়া প্রয়োজন।
মিজ.
আখতার বলেন, "হেঁচকি নিরাময়ে ঘরোয়া
চিকিৎসা যদি কাজ না
করে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"
হেঁচকির
তীব্রতার ওপর নর্ভির করে
২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার
মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াউচিত বলে মন্তব্য করেন
মিজ. আখতার।
এছাড়া
নিয়মিত হেঁচকিতে দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম ব্যহত
হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার উপদেশ দেন
বিশেষজ্ঞরা।
#মোঃ রায়হান চৌধুরী
#মোঃ রায়হান চৌধুরী

কোন মন্তব্য নেই