আমাদের কোম্পানির মালিকপক্ষ সপ্তাহে দুইদিন ছুটির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

আমাদের কোম্পানির মালিকপক্ষ সপ্তাহে দুইদিন ছুটির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।















প্রশ্ন : আমাদের কোম্পানির মালিকপক্ষ সপ্তাহে দুইদিন ছুটির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। এইচ.আর ডিপার্টমেন্ট-কে প্রস্তাবনা (Special Approval Note) তৈরি করতে বলা হয়েছে। দুইদিন ছুটির স্বপক্ষে উভয়-কূল রক্ষা করে যুক্তিগুলো কী কী হতে পারে?
.
বিক্রয়বন্ধু’র জবাব : একটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। বাংলাদেশী একটি ওষুধ কোম্পানি (ছোট) অনেক চেষ্টার পরও মাসিক গড় বিক্রি এক কোটি টাকার বেশি করতে পারছিল না। কেটে গেল অনেকগুলো বছর, কিন্তু কোনো বুদ্ধিই কাজে লাগল না। বিক্রির হাল-অবস্থা দীর্ঘকাল অপরিবর্তিত থাকল। অবশেষে দূরদর্শী মালিক সপ্তাহে দুইদিন ছুটি ঘোষণা দিলেন। ব্যস, তাতেই কাজ হলো। পরের মাসেই বিক্রি এক কোটি টাকা অতিক্রম করল; আজও তা অব্যাহত আছে। সঙ্গত কারণেই কোম্পানির নাম প্রকাশ করছি না; কিন্তু ঘটনা সত্য।
অধিকাংশ মালিকপক্ষ মনে করেন- বেশিক্ষণ অফিসে আটকে রাখলেই বুঝি বেশি কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। এটা যে কত বড় ভুল ধারণা সেটা যদি বুঝতেন, তাহলে হয়ত সপ্তাহে তিনদিন ছুটিরই বন্দোবস্ত করতেন! কেউ যদি প্রত্যেক দিন ৩-৪ ঘণ্টা পূর্ণ মনোযোগ সহকারে কাজ করেন, তার টেবিলে কোনো কাজ আটকে (pending) থাকার কথা নয়। যাদের টেবিলে ফাইলের স্তূপ জমে থাকে, তারা সেটা ইচ্ছে করেই করেন! তারা মালিককে দেখানোর জন্য অনেক রাত পর্যন্ত অফিসেও থাকেন, কিন্তু আসলে কাজ করেন সবার চেয়ে কম!
সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন করা হলে প্রথমত অফিসের খরচ (শনিবারে বিদ্যুৎ, পানি, এসি ,খাবার বিল ইত্যাদি) কমবে। দ্বিতীয়ত, কর্মীদের পিছুটান কমে যাবে। সত্যি কথা বলতে কি, শুক্রবার একদিনে পরিবারের সব কাজ গুছিয়ে শেষ করা যায় না; দিনের বেশ খানিকটা সময় ধর্মীয় কারণে ব্যয় হয়। তারপর বাজার করা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি আবশ্যকীয় কাজ থাকে; সামাজিক অনুষ্ঠানেও যেতে হয়। সেই অর্থে শরীরের বিশ্রাম আর হয় না।
ছুটি দুইদিন হলে মানুষ সকল পারিবারিক ও সামাজিক প্রয়োজন মিটিয়েও বিশ্রাম নিতে পারবে। ফলে বাকি পাঁচদিন পূর্ণ উদ্যমে কোম্পানির কাজে মনোনিবেশ করবেন। এতে করে কর্মীদের productivity বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি প্রত্যেককে বছরে একবার LFA-সহ টানা দুই সপ্তাহের ছুটিতে পাঠানো উচিত। মোট output এখনকার চাইতে বেশি বৈকি কম হবে না! সর্বোপরি ভালো কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সপ্তাহে একদিন ছুটি বাড়লে কর্মীদের চাকরির প্রতি দায়িত্ব ও মায়া বহুগুণ বেড়ে যাবে।
সপ্তাহে দুইদিন ছুটি সমগ্র বিশ্বেই প্রচলিত। এমনকি জাপানে দুপুরে খাওয়ার পর কর্মীদের অফিসে আধাঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগও দেওয়া হয়। এতে করে তাদের productivity কমেনি, বরং বেড়েছে। পাশ্চাত্য বিশ্ব এখন সপ্তাহে তিনদিন ছুটির যৌক্তিকতা নিয়ে মাতামাতি করছে!






বাংলাদেশে সরকারি ছুটি সপ্তাহে দুইদিন। শনিবার ব্যাংক-এ লেনদেনও বন্ধ থাকে। এই বাস্তবতায় ছয়দিন অফিস খোলা রেখে খুব বেশি লাভ হয় না, বরং কর্মীদের মানসিক যন্ত্রণা বাড়ে। কারণ তাঁরা work life balance করতে পারেন না। যে কোনো অফিসে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো সপ্তাহের যে কোনো দুই অথবা তিনদিনেই করে ফেলা সম্ভব। বর্তমান ডিজিটাল যুগে অফিসে না এসেও ভিডিও কনফারেন্স-এ মিটিং করা যেতে পারে। সেখানে ছয়দিন অফিস খোলা রাখাটা অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। তবে কিছু কর্মক্ষেত্র আছে যেখানে ননস্টপ সার্ভিস প্রয়োজন; সেখানে শিফট ডিউটি করানো যেতে পারে। যাঁরা ছুটির দিনে কাজ করবেন, তাঁরা অন্য দুইদিন ছুটি পাবেন। অর্থাৎ যে কোনো মূল্যে কর্মীর বিশ্রাম ও পারিবারিক প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে ব্যবসারত সকল বহুজাতিক কোম্পানিতে সপ্তাহে দুইদিন ছুটি দেওয়া হয়। দিন শেষে বেশি বিক্রি কিন্তু তারাই করছে। সপ্তাহে ছয় দিন খোলা রেখেও স্থানীয় দেশীয় কোম্পানিগুলো বিক্রিতে ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে আছে মূলত কর্মীদের মনে স্বস্তি নেই বলে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচদিন যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা তুলনামূলক বেশি সময় ধরে সুস্থ শরীরে কোম্পানির অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারেন।
যে কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসা করা যেতেেই পারে। শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে- কর্মীরা সন্তুষ্ট কি-না? কেননা কর্মীদের মনোকষ্টে রেখে কখনোই কোম্পানির লাভ বাড়ানো সম্ভব নয়। বিক্রি বাড়ানোর প্রধান কৌশল কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা (সেটা বেতন অথবা ছুটি অথবা দু’টোই হতে পারে) বাড়িয়ে উজ্জীবিত রাখা! মালিকপক্ষ উপরোক্ত যুক্তিগুলো যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন, তত তাড়াতাড়ি বেশি লাভের মুখ দেখবেন।
যাঁরা কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত পড়লেন, তাঁরা শুধু লাইক দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবেন না। যত পারেন, শেয়ার করেন। তাহলে নায্য দাবি আন্দেলনে রূপ নেবে এবং দাবি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।(Collected from facebook)






কোন মন্তব্য নেই