এক দিনে ১৫ মৃত্যু
এক দিনেই ১৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৫ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে আরো ২৬৬ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৮৩৮ জন হয়েছে। গতকাল করোনা বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এ দিকে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরো ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে তিনজন, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে একটি আট মাসের শিশু, শরীয়তপুরে ব্যাংক কর্মচারী, নওগাঁয় একজন, বরিশালে একজন, বগুড়ায় একজন, নরসিংদীর বেলাবতে একজন, খুলনায় একজন, মুন্সীগঞ্জে একজন, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে একজন ও রাজস্থলীতে একজন এবং হবিগঞ্জের মাধবপুরে একজন রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আরো ১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। তারা সবাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১৮ মার্চের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭৫ জন মারা গেল নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। গতকাল আরো ২৬৬ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯)। এটা নিয়ে বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৮ জন। সারা দেশের ১৭টি পিসিআর পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৬৬ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। যত রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছে। মোট রোগীর প্রায় ৩১ শতাংশ হাসপাতালের সেবা নিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার করোনা বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য প্রদান করেন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ৪০টি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। দেশের অন্যত্র আক্রান্তরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছে।
অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই বুলেটিনে গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আক্রান্তদের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, আক্রান্তদের ৪৬ শতাংশ ঢাকা শহরে এবং ২৩ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ শহরে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা ২১ শতাংশ। এরপর ১৯ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জের স্থান। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬২ শতাংশ নারী।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বাংলাদেশে মোট আক্রান্তদের ৬১ শতাংশ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে এবং অবশিষ্টরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, গত এক মাস এক সপ্তাহে সারা দেশে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছে ২৭ জন। অর্থাৎ ১.৮ শতাংশ রোগী আইসিইউ সুবিধা নিয়েছে। মন্ত্রী পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, এই হারে ১০ হাজার রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট নিতে ১৮০টি ভেন্টিলেটর লাগবে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের সাপোর্ট রয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর কোনো চিকিৎসা লাগে না এবং অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্টসহ কিছু লাগতে পারে।
লক্ষ্মীপুরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরো ১৭ জন আক্রান্ত
লক্ষ্মীপুর সংবাদাদাতা জানান, চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি থেকে পাঠানো রিপোর্টে লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রামগঞ্জে ১৩ জন, কমলনগরে তিনজন এবং সদর উপজেলায় একজন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গফফার। রামগঞ্জ উপজেলার ১৩ জনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক, চারজন স্বাস্থ্যকর্মী, তিন মাস বয়সী একটি শিশুসহ কাশিমনগর গ্রামের ছয়জন, সমেষপুর গ্রামের একজন ও দক্ষিণ চ-িপুর গ্রামের একজন রয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর এবং কমলনগর উপজেলার মুন্সিরহাট, হাজিরহাট ও চরলরেন্স এলাকার একজন করে চারজন। এর আগে গত ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় দুইজন করোনাক্রান্ত হন। তারা ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯ জন। এ দিকে লক্ষ্মীপুরে লকডাউনের পঞ্চম দিন ছিল গতকাল। এ সময়ে বিভিন্ন হাট বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানছে না মানুষেরা।
খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশনে দুইজনের মৃত্যু
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় হাসপতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে তারা মারা যান। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা: শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আসাদুজ্জামান (২৪) করোনা সাসপেক্টটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। আসাদুজ্জামান এজমার রোগী ছিলেন। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আসাদুজ্জামানের বাড়ি নগরীর লবণচরায়। অপরদিকে বেলা সাড়ে ১২টায় খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মিতু (১০) নামে অপর এক শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভোরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেও শ^াসকষ্টে ভুগছিল। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বাড়ি রূপসা উপজেলা সদরের কাজদিয়ায়।
মুন্সীগঞ্জে নতুন আক্রান্ত ১৩, মোট ৩৭
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় তিনজন, টংগীবাড়িতে একজন, লৌহজংয়ে একজন, গজারিয়ায় একজন, সিরাজদিখানে তিনজন ও শ্রীনগর উপজেলায় তিনজন। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে মোট আক্রান্ত হলোন ৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন ১০ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৯৬ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৯১৭ জন। বর্তমানে রয়েছেন ২১১ জন।
লৌহজংয়ে উপসর্গ ছাড়াই বৃদ্ধার করোনা পজেটিভ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কোভিড-১৯ রোগের কোনো উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট ছাড়াই ৭০ বছর বয়সের এক নারীর করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। তিনি ওই উপজেলার কনকসারের অন্বেষণ পল্লীর বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জে বেড়াতে যাওয়া ওই নারীকে সন্দেহজনক হিসেবে টেস্ট করানো হলে আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
হাতিমারায় বৃদ্ধের মৃত্যু মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের হাতিমারার আমতলায় বৃহস্পতিবার রাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক বৃদ্ধের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। এই বৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে অসুস্থ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে যান। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পরে প্রশাসনকে না জানিয়েই তাকে দাফনের ব্যবস্থা নেয় হয়। প্রশাসন বিষয়টি জানার পর সতর্কতার সাথে নিয়ম মেনে এই বৃদ্ধকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
বাঘাইছড়ি ও রাজস্থলীতে দুই যুবকের মৃত্যু
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাঘাইছড়ির ইমাম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে এবং রাজস্থলীর থুইসাসিং মারমা নিজ বাড়িতে মারা যান। বাঘাইছড়ির মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আগেই চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে এবং রাজস্থলীর মৃত যুবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৫ এপ্রিল সকালে ইমাম উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে দাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ দিকে রাজস্থলী উপজেলায় থুইসাসিং মারমা চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ১২ দিন আগে তিনি নিজ বাড়ি বাঙ্গালহালিয়ায় আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।
মাধবপুরে কিশোরীর মৃত্যু
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের পানিহাতা গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার ওই কিশোরী জ¦র, কাশি নিয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। পরে গ্রামের করবস্থানের তাকে দাফন করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের কোয়ারিন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান মাধবপুর থানার ওসি।
আদমদীঘিতে পুলিশ সদস্য আক্রান্ত, উপজেলা লকডাউন
বগুড়া অফিস ও আদমদীঘি সংবাদদাতা জানান, ঢাকায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলা রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল এবং উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের শাঁওইল কানচনপাড়ার বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি গত ১০ এপ্রিল ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আসেন। কিন্তু তিনি হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। এ সময় তিনি পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা করেন। এ অবস্থায় তিনি অসুস্থতা বোধ করলে গত ১৩ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার তার টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পুরো উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করেন।
বামনা প্রেস ক্লাব সভাপতি আক্রান্ত
বরগুনা ও বামনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় এক সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। আক্রান্ত এই সাংবাদিক বরগুনার বামনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। নিজ অর্থায়নে এ সাংবাদিক বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত ১৪ এপ্রিল এই সাংবাদিকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তার কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি বর্তমানে নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ নিয়ে বরগুনায় মোট পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে। এর মধ্যে ৮৬ জনের রিপোর্ট এসেছে। যাতে নেগেটিভ এসেছে ৮২ জনের এবং পজিটিভ এসেছে চারজনের। ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রামে আরো একজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকু-ু উপজেলার ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি)-তে আইসোলেশনে থাকা ওই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তি বজল আহমেদ (৬৫) নগরীর পাহাড়তলী থানার সাড়াইপাড়ার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলরের বাসার নৈশপ্রহরী। একই এলাকায় এর আগেও একজন নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। বজল আহমেদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছিল। এছাড়া তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। নগরীর বায়োজিদ থানার আরেফিন নগরে তাকে দাফন করা হয়। আল মানাহিল ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তার দাফনে এগিয়ে আসে।
বগুড়া আইসোলেশন কেন্দ্রে রিকশাচালকের মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সর্দি, জ¦র, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন সদরের সাবগ্রাম চান্দুপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক এনামুল (৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এনামুল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় তার মৃত্যু হয়। লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।
পিরোজপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পিরোজপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে পিরোজপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ সংক্রান্ত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন তিনি।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারী জেলা লকডাউন ঘোষণার পরও গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লা থেকে নীলফামারীর নিজগ্রামে প্রবেশ করেছে ৪৭ জন মানুষ। এ নিয়ে জেলায় প্রবেশ করে ৮ হাজার ৮০২ জন শ্রমজীবী মানুষ। তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, এ পর্যন্ত ২০৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে এ ছয়জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
ফেনীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত
ছাগলনাইয়া-পরশুরাম (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফেনীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো। গত সোমবার পাঠানো নমুনার রিপোর্ট পজেটিভ বলে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার জানানো হয়েছে। পরে প্রসাশন উপজেলার পশ্চিম মধুগ্রামে চারটি বাড়ি লকডাউনের ঘোষণা দেয়। গত ২৫ মার্চ আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে ছাগলনাইয়ার মধুগ্রামে আসে।
বেলাবতে একজনের মৃত্যু
বেলাব (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে নান্নু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তি উপজেলার আমলাব গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান। গতকাল শুক্রবার সকালে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেলাব উপজেলা থেকে ২৪ জনের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনের রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
জয়পুরহাটে প্রথম দুই রোগী শনাক্ত : জেলা লকডাউন
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটের ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের নেগেটিভ হলেও দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাত ১০টা থেকে জেলায় লকডাউন কার্যকর করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। করোনা শনাক্ত দুইজনই কালাই উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামের বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জ থেকে তারা কালাই উপজেলার গ্রামের বাড়িতে আসেন।
নওগাঁয় এক ব্যক্তির মৃত্যু
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে মাহবুব আলম (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত মাহবুব আলম দুই দিন আগে জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় তার চকদেবপাড়ার বাসায় আসেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মাহবুব আলমের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মনজুর এ মোর্শেদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃত ব্যক্তির প্রতিবেশীরা আক্রান্ত হচ্ছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে করোনায় মারা যাওয়া মালয়েশিয়া প্রবাসীর আরেক ছোট ভাই এবং আখাউড়ায় করোনায় মারা যাওয়া নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা নারীর প্রতিবেশী তরুণী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অভিজিৎ রায় জানান, গত ৮ এপ্রিল জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পথে মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহালমের মৃত্যু হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শাহালমের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায় এবং করোনা পজেটিভ আসে। পরবর্তীকালে শাহালমের স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ভাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে স্ত্রী, এক ভাই ও মেয়ের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এই তিনজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার আরেক ভাইয়েরও করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। নতুন আক্রান্তকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় একই পরিবারে করোনাভাইরাসে পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হলেন।
একই দিন জেলার আখাউড়া উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক নারী (৫০) শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে নমুনা পরীক্ষার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ওই গ্রামের অনেকেরই নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাটানো হয়। শুক্রবার উপজেলার মুগড়া ইউনিয়নের চর নারায়ণপুর গ্রামের এই তরুণীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এর আগে গতকালও একই গ্রামের এক নারী ও এক পুরুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তাদেরকে জেলা শহরের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে একজন মারা যাওয়াসহ আখাউড়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আটজন দাঁড়াল। সব মিলিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ জনে।
বরিশালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যু
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন জানান, গত বুধবার দুপুরে ৪০ বছর বয়সী এক রোগী হাসপাতালের নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। পরে তার মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকায় গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বাকির হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে নিরাপত্তাসহকারে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২০ জন রোগী আছেন। যার মধ্যে সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
কুমিল্লায় দুইজন নারায়ণগঞ্জ ফেরতসহ আক্রান্ত ৩০
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার লাকসাম ও দাউদকান্দি উপজেলার দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। আক্রান্ত একজনের বাড়ি লাকসামের দোখাইয়া চাঁদপুরে ও অন্যজনের দাউদকান্দি পৌরসভার সাহাপাড়া এলাকার। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ জনে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলায় চার হাজার ৪৪৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৪ জনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন এক হাজার ১১৬ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলা থেকে ২৩৮ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে ১৯০ জনের রিপোর্ট এসেছে। এই ১৯০ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৩০ জনের।
না’গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু, উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে তিনজন
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি ডা: জাহিদুল ইসলাম। এ সময়ের মধ্যে জেলায় চারজন মারা গেছেন বলে জানান তিনি। গতকাল শুক্রবার জেলায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানান তিনি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো সুস্থ হওয়ার সংবাদ নেই। ডা: জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফলে ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৬১ জনের ফলাফলে পজিটিভ এসেছে।
এ দিকে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের সব উপসর্গ নিয়ে শহরের জামতলা এলাকায় দু’জন ও আমলাপাড়া এলাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তারা মারা যান। তাদের মধ্যে জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোডের মুজিব ভিলার ৬০ বছর বয়সী মজিবর রহমান সরকার ও ধোপাপট্টি এলাকার ৪০ বছর বয়সী হুমায়ুন। আমলাপাড়া এলাকায় সব উপসর্গ নিয়ে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে (করোনা হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন ৫৮ বছর বয়সী ওহিদুজ্জামান। স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, আমার ওয়ার্ডেই পড়েছে দু’টি এলাকা। এখানে মৃত তিনজনই শতভাগ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। পরিবারগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লাশগুলো আমি দায়িত্ব নিয়ে দাফন করেছি।
শরীয়তপুরে ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যু
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক পিয়নের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার চামটা চামটা এলাকার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি ঢাকার গুলশান-১ নাম্বারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে পিয়নের চাকরি করতেন। মৃত্যুর পর সকাল ১০টার দিকে করোনা পরীক্ষার জন্য ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাজারহাটে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ৮ মাসের শিশুর মৃত্যু
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আট মাসের এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দু’টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে। মৃত আয়শা খাতুন উপজেলার ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবত্তর পগলার দরগা গ্রামের হবিবর হোসেনের নাতনি ও সোহেল মিয়ার কন্যা। করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত ওই শিশুসহ ওর নানীর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে শুক্রবার আরো ৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় পাঠানো ৫৫২ জনের নমুনার মধ্যে ফলাফল এসেছে ৫১৭ জনের। প্রাপ্ত ফলাফলে আগের ৯ জন বাদে নতুন করে আর কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। জেলায় বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন এক হাজার ৫৩০ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬১ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
বাঁশখালী উপজেলা লকডাউন
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাঁশখালী উপজেলা সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তেঁতুলিয়ায় একজন শনাক্ত, পঞ্চগড় জেলা লকডাউন
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বশেষ জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো পঞ্চগড়। গতকাল শুক্রবার তেঁতুলিয়া উপজেলার একজনের শরীরে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ দিকে পঞ্চগড় জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সিভিল সার্জন ডা: ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারে আইসোলেশনে থাকা রোগীর মৃত্যু
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেসন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন এক রোগী। মুমূর্ষু অবস্থায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। রোগীটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না নিশ্চিত হতে তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপপরিচালক ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত ব্যক্তির আগে থেকেই অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস ছিল। রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার ওই ব্যক্তির বয়স ৫০ বছর হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আরো ১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। তারা সবাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ১৮ মার্চের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৭৫ জন মারা গেল নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। গতকাল আরো ২৬৬ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯)। এটা নিয়ে বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৩৮ জন। সারা দেশের ১৭টি পিসিআর পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট দুই হাজার ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৬৬ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। যত রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এর মধ্যে প্রায় ৫০০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছে। মোট রোগীর প্রায় ৩১ শতাংশ হাসপাতালের সেবা নিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার করোনা বিষয়ক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব তথ্য প্রদান করেন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন ৪০টি জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত পাওয়া গেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। দেশের অন্যত্র আক্রান্তরা ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছে।
অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই বুলেটিনে গতকাল আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আক্রান্তদের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, আক্রান্তদের ৪৬ শতাংশ ঢাকা শহরে এবং ২৩ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ শহরে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা ২১ শতাংশ। এরপর ১৯ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও মুন্সীগঞ্জের স্থান। মোট আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৬২ শতাংশ নারী।
অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, বাংলাদেশে মোট আক্রান্তদের ৬১ শতাংশ বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে এবং অবশিষ্টরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, গত এক মাস এক সপ্তাহে সারা দেশে আইসিইউ সাপোর্ট নিয়েছে ২৭ জন। অর্থাৎ ১.৮ শতাংশ রোগী আইসিইউ সুবিধা নিয়েছে। মন্ত্রী পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, এই হারে ১০ হাজার রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট নিতে ১৮০টি ভেন্টিলেটর লাগবে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের সাপোর্ট রয়েছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর কোনো চিকিৎসা লাগে না এবং অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্টসহ কিছু লাগতে পারে।
লক্ষ্মীপুরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ আরো ১৭ জন আক্রান্ত
লক্ষ্মীপুর সংবাদাদাতা জানান, চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি থেকে পাঠানো রিপোর্টে লক্ষ্মীপুর জেলায় ১৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রামগঞ্জে ১৩ জন, কমলনগরে তিনজন এবং সদর উপজেলায় একজন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গফফার। রামগঞ্জ উপজেলার ১৩ জনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক, চারজন স্বাস্থ্যকর্মী, তিন মাস বয়সী একটি শিশুসহ কাশিমনগর গ্রামের ছয়জন, সমেষপুর গ্রামের একজন ও দক্ষিণ চ-িপুর গ্রামের একজন রয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর এবং কমলনগর উপজেলার মুন্সিরহাট, হাজিরহাট ও চরলরেন্স এলাকার একজন করে চারজন। এর আগে গত ১২ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় দুইজন করোনাক্রান্ত হন। তারা ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৯ জন। এ দিকে লক্ষ্মীপুরে লকডাউনের পঞ্চম দিন ছিল গতকাল। এ সময়ে বিভিন্ন হাট বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানছে না মানুষেরা।
খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশনে দুইজনের মৃত্যু
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় হাসপতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে তারা মারা যান। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা: শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় আসাদুজ্জামান (২৪) করোনা সাসপেক্টটেড আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। আসাদুজ্জামান এজমার রোগী ছিলেন। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আসাদুজ্জামানের বাড়ি নগরীর লবণচরায়। অপরদিকে বেলা সাড়ে ১২টায় খুমেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মিতু (১০) নামে অপর এক শিশুর মৃত্যু হয়। শুক্রবার ভোরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেও শ^াসকষ্টে ভুগছিল। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বাড়ি রূপসা উপজেলা সদরের কাজদিয়ায়।
মুন্সীগঞ্জে নতুন আক্রান্ত ১৩, মোট ৩৭
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জ জেলায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় তিনজন, টংগীবাড়িতে একজন, লৌহজংয়ে একজন, গজারিয়ায় একজন, সিরাজদিখানে তিনজন ও শ্রীনগর উপজেলায় তিনজন। এ নিয়ে মুন্সীগঞ্জে মোট আক্রান্ত হলোন ৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন ১০ জন। কোয়ারেন্টিন থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৯৬ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৯১৭ জন। বর্তমানে রয়েছেন ২১১ জন।
লৌহজংয়ে উপসর্গ ছাড়াই বৃদ্ধার করোনা পজেটিভ : মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় কোভিড-১৯ রোগের কোনো উপসর্গ জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট ছাড়াই ৭০ বছর বয়সের এক নারীর করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। তিনি ওই উপজেলার কনকসারের অন্বেষণ পল্লীর বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জে বেড়াতে যাওয়া ওই নারীকে সন্দেহজনক হিসেবে টেস্ট করানো হলে আইইডিসিআর থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
হাতিমারায় বৃদ্ধের মৃত্যু মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের হাতিমারার আমতলায় বৃহস্পতিবার রাতে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক বৃদ্ধের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। এই বৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতেন। পরবর্তীতে অসুস্থ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে যান। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পরে প্রশাসনকে না জানিয়েই তাকে দাফনের ব্যবস্থা নেয় হয়। প্রশাসন বিষয়টি জানার পর সতর্কতার সাথে নিয়ম মেনে এই বৃদ্ধকে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
বাঘাইছড়ি ও রাজস্থলীতে দুই যুবকের মৃত্যু
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বাঘাইছড়ির ইমাম উদ্দিনকে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে এবং রাজস্থলীর থুইসাসিং মারমা নিজ বাড়িতে মারা যান। বাঘাইছড়ির মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আগেই চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছে এবং রাজস্থলীর মৃত যুবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৫ এপ্রিল সকালে ইমাম উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে দাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ দিকে রাজস্থলী উপজেলায় থুইসাসিং মারমা চট্টগ্রামে পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ১২ দিন আগে তিনি নিজ বাড়ি বাঙ্গালহালিয়ায় আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।
মাধবপুরে কিশোরীর মৃত্যু
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের পানিহাতা গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার ওই কিশোরী জ¦র, কাশি নিয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মৃত্যু হয়। পরে গ্রামের করবস্থানের তাকে দাফন করা হয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের কোয়ারিন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে বলে জানান মাধবপুর থানার ওসি।
আদমদীঘিতে পুলিশ সদস্য আক্রান্ত, উপজেলা লকডাউন
বগুড়া অফিস ও আদমদীঘি সংবাদদাতা জানান, ঢাকায় কর্মরত এক পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলা রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল এবং উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের শাঁওইল কানচনপাড়ার বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি গত ১০ এপ্রিল ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আসেন। কিন্তু তিনি হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ান। এ সময় তিনি পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা করেন। এ অবস্থায় তিনি অসুস্থতা বোধ করলে গত ১৩ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার তার টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পুরো উপজেলা লকডাউন ঘোষণা করেন।
বামনা প্রেস ক্লাব সভাপতি আক্রান্ত
বরগুনা ও বামনা সংবাদদাতা জানান, বরগুনায় এক সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। আক্রান্ত এই সাংবাদিক বরগুনার বামনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি। নিজ অর্থায়নে এ সাংবাদিক বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়ায় গত ১৪ এপ্রিল এই সাংবাদিকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তার কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তিনি বর্তমানে নিজ বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ নিয়ে বরগুনায় মোট পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে। এর মধ্যে ৮৬ জনের রিপোর্ট এসেছে। যাতে নেগেটিভ এসেছে ৮২ জনের এবং পজিটিভ এসেছে চারজনের। ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রামে আরো একজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচজনে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকু-ু উপজেলার ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি)-তে আইসোলেশনে থাকা ওই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তি বজল আহমেদ (৬৫) নগরীর পাহাড়তলী থানার সাড়াইপাড়ার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একজন কাউন্সিলরের বাসার নৈশপ্রহরী। একই এলাকায় এর আগেও একজন নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গতকাল শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। বজল আহমেদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ছিল। এছাড়া তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। নগরীর বায়োজিদ থানার আরেফিন নগরে তাকে দাফন করা হয়। আল মানাহিল ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তার দাফনে এগিয়ে আসে।
বগুড়া আইসোলেশন কেন্দ্রে রিকশাচালকের মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া করোনা আইসোলেশন কেন্দ্র মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সর্দি, জ¦র, কাশিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন সদরের সাবগ্রাম চান্দুপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক এনামুল (৪২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এনামুল হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় তার মৃত্যু হয়। লাশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে।
পিরোজপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে পিরোজপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে পিরোজপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে এ সংক্রান্ত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন তিনি।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, নীলফামারী জেলা লকডাউন ঘোষণার পরও গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লা থেকে নীলফামারীর নিজগ্রামে প্রবেশ করেছে ৪৭ জন মানুষ। এ নিয়ে জেলায় প্রবেশ করে ৮ হাজার ৮০২ জন শ্রমজীবী মানুষ। তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. রনজিৎ কুমার বর্মন জানান, এ পর্যন্ত ২০৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে এ ছয়জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
ফেনীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত
ছাগলনাইয়া-পরশুরাম (ফেনী) সংবাদদাতা জানান, ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফেনীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো। গত সোমবার পাঠানো নমুনার রিপোর্ট পজেটিভ বলে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার জানানো হয়েছে। পরে প্রসাশন উপজেলার পশ্চিম মধুগ্রামে চারটি বাড়ি লকডাউনের ঘোষণা দেয়। গত ২৫ মার্চ আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে ছাগলনাইয়ার মধুগ্রামে আসে।
বেলাবতে একজনের মৃত্যু
বেলাব (নরসিংদী) সংবাদদাতা জানান, নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা নিয়ে নান্নু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তি উপজেলার আমলাব গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতে নিজ বাড়িতে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান। গতকাল শুক্রবার সকালে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বেলাব উপজেলা থেকে ২৪ জনের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনের রিপোর্ট এসেছে। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।
জয়পুরহাটে প্রথম দুই রোগী শনাক্ত : জেলা লকডাউন
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটের ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২১ জনের নেগেটিভ হলেও দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাত ১০টা থেকে জেলায় লকডাউন কার্যকর করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। করোনা শনাক্ত দুইজনই কালাই উপজেলার জিন্দারপুর গ্রামের বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জ থেকে তারা কালাই উপজেলার গ্রামের বাড়িতে আসেন।
নওগাঁয় এক ব্যক্তির মৃত্যু
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে মাহবুব আলম (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত মাহবুব আলম দুই দিন আগে জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁয় তার চকদেবপাড়ার বাসায় আসেন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মাহবুব আলমের নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মনজুর এ মোর্শেদ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃত ব্যক্তির প্রতিবেশীরা আক্রান্ত হচ্ছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে করোনায় মারা যাওয়া মালয়েশিয়া প্রবাসীর আরেক ছোট ভাই এবং আখাউড়ায় করোনায় মারা যাওয়া নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা নারীর প্রতিবেশী তরুণী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: অভিজিৎ রায় জানান, গত ৮ এপ্রিল জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও সর্দি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পথে মালয়েশিয়া প্রবাসী শাহালমের মৃত্যু হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শাহালমের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায় এবং করোনা পজেটিভ আসে। পরবর্তীকালে শাহালমের স্ত্রী, মেয়ে ও দুই ভাইয়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে স্ত্রী, এক ভাই ও মেয়ের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এই তিনজন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার আরেক ভাইয়েরও করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। নতুন আক্রান্তকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় একই পরিবারে করোনাভাইরাসে পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হলেন।
একই দিন জেলার আখাউড়া উপজেলায় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক নারী (৫০) শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে নমুনা পরীক্ষার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ওই গ্রামের অনেকেরই নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাটানো হয়। শুক্রবার উপজেলার মুগড়া ইউনিয়নের চর নারায়ণপুর গ্রামের এই তরুণীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এর আগে গতকালও একই গ্রামের এক নারী ও এক পুরুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। তাদেরকে জেলা শহরের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে একজন মারা যাওয়াসহ আখাউড়ায় করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা আটজন দাঁড়াল। সব মিলিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ জনে।
বরিশালে করোনা ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যু
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা: বাকির হোসেন জানান, গত বুধবার দুপুরে ৪০ বছর বয়সী এক রোগী হাসপাতালের নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়। পরে তার মধ্যে করোনা উপসর্গ থাকায় গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তাকে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। বাকির হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে নিরাপত্তাসহকারে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২০ জন রোগী আছেন। যার মধ্যে সাতজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
কুমিল্লায় দুইজন নারায়ণগঞ্জ ফেরতসহ আক্রান্ত ৩০
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার লাকসাম ও দাউদকান্দি উপজেলার দুইজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছেন। আক্রান্ত একজনের বাড়ি লাকসামের দোখাইয়া চাঁদপুরে ও অন্যজনের দাউদকান্দি পৌরসভার সাহাপাড়া এলাকার। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ জনে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলায় চার হাজার ৪৪৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৩৩৪ জনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন এক হাজার ১১৬ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলা থেকে ২৩৮ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। এর মধ্যে ১৯০ জনের রিপোর্ট এসেছে। এই ১৯০ জনের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৩০ জনের।
না’গঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় চারজনের মৃত্যু, উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে তিনজন
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জন করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি ডা: জাহিদুল ইসলাম। এ সময়ের মধ্যে জেলায় চারজন মারা গেছেন বলে জানান তিনি। গতকাল শুক্রবার জেলায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানান তিনি। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো সুস্থ হওয়ার সংবাদ নেই। ডা: জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফলে ৪৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৬৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৬১ জনের ফলাফলে পজিটিভ এসেছে।
এ দিকে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের সব উপসর্গ নিয়ে শহরের জামতলা এলাকায় দু’জন ও আমলাপাড়া এলাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তারা মারা যান। তাদের মধ্যে জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোডের মুজিব ভিলার ৬০ বছর বয়সী মজিবর রহমান সরকার ও ধোপাপট্টি এলাকার ৪০ বছর বয়সী হুমায়ুন। আমলাপাড়া এলাকায় সব উপসর্গ নিয়ে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে (করোনা হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন ৫৮ বছর বয়সী ওহিদুজ্জামান। স্থানীয় কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, আমার ওয়ার্ডেই পড়েছে দু’টি এলাকা। এখানে মৃত তিনজনই শতভাগ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। পরিবারগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লাশগুলো আমি দায়িত্ব নিয়ে দাফন করেছি।
শরীয়তপুরে ব্যাংক কর্মচারীর মৃত্যু
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক পিয়নের (১৮) মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার চামটা চামটা এলাকার নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তি ঢাকার গুলশান-১ নাম্বারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে পিয়নের চাকরি করতেন। মৃত্যুর পর সকাল ১০টার দিকে করোনা পরীক্ষার জন্য ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তার সংস্পর্শে আসা সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রাজারহাটে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ৮ মাসের শিশুর মৃত্যু
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্দি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আট মাসের এক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দু’টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে। মৃত আয়শা খাতুন উপজেলার ঘড়িয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবত্তর পগলার দরগা গ্রামের হবিবর হোসেনের নাতনি ও সোহেল মিয়ার কন্যা। করোনা পরীক্ষার জন্য মৃত ওই শিশুসহ ওর নানীর নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে শুক্রবার আরো ৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় পাঠানো ৫৫২ জনের নমুনার মধ্যে ফলাফল এসেছে ৫১৭ জনের। প্রাপ্ত ফলাফলে আগের ৯ জন বাদে নতুন করে আর কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। জেলায় বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন এক হাজার ৫৩০ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬১ জন। টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
বাঁশখালী উপজেলা লকডাউন
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাঁশখালী উপজেলা সম্পূর্ণ লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তেঁতুলিয়ায় একজন শনাক্ত, পঞ্চগড় জেলা লকডাউন
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রংপুর বিভাগের আট জেলার মধ্যে সর্বশেষ জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো পঞ্চগড়। গতকাল শুক্রবার তেঁতুলিয়া উপজেলার একজনের শরীরে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ দিকে পঞ্চগড় জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে এই লকডাউন কার্যকর হবে। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সভায় পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট, সিভিল সার্জন ডা: ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারে আইসোলেশনে থাকা রোগীর মৃত্যু
কক্সবাজার সংবাদদাতা জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসোলেসন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন এক রোগী। মুমূর্ষু অবস্থায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। রোগীটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না নিশ্চিত হতে তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপপরিচালক ডা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত ব্যক্তির আগে থেকেই অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস ছিল। রামু উপজেলার গর্জনিয়া এলাকার ওই ব্যক্তির বয়স ৫০ বছর হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কোন মন্তব্য নেই