ভারতে নাগরিকত্ব আন্দোলনকারী গর্ভবতী মুসলিম নারী জেলে বন্দী
প্রায় একমাস আগে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ বছর বয়সী সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী সাফুরা জারগারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এপ্রিলের ১০ তারিখে তাকে তুলে নিয়ে গেলেও তার জামিনের কোন নামগন্ধ নেই আজো।
জানা যায়, ১০ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে একদল পুলিশ গিয়ে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং তাকে গ্রেফতার করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জারগারের স্বামী জানান, তারা উনিশ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। গ্রেফতারের সময় সাফুরা গর্ভবতী ছিলেন। তবে কোন কথাই শোনেনি পুলিশ, গ্রেফতার করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
১০ এপ্রিল গ্রেফতারের সময় দিল্লি পুলিশের অফিসাররা এই দম্পতিকে জানায় তারা 'বিশেষ সেল' থেকে এসেছে। এসময় 'সন্ত্রাসবিরোধী' কাজের অভিযোগে পুলিশ তাদেরকে মধ্য দিল্লিতে অফিসে যেতে বলে। এসময় পুলিশ তাদের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জড়িত থাকার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জেলে পাঠানোর পর থেকে দীর্ঘ একমাস ধরে দিল্লির উপচে পড়া তিহার জেলে বন্দী রয়েছেন সাফুরা। এমন সময়েই তাকে জেলে রাখা হয়েছে যখন গর্ভবতী মহিলারা করোনা সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। জেলের ঘিঞ্জি পরিবেশে তার করোনা কিংবা অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি।
জারগারের বিরুদ্ধে 'বেআইনি ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)' - এর আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি ভারতের অন্যতম কঠোর আইন। এই মামলায় তার পক্ষে জামিন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এমতবস্থায় দেশে বিদেশে ঘটনাটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
উল্লেখ্য গ্রেপ্তারের পর থেকে এপর্যন্ত (১২ মে) তাকে তার স্বামী এবং তার আইনজীবীর কাছে দু'বার পাঁচ মিনিটের কল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোভিড -১৯ নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে উভয় দর্শন এবং চিঠিগুলোও বাতিল করা হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সিএএর বিরুদ্ধে জামিয়া সমন্বয় কমিটির (জেসিসি) নামের সংগঠনের একজন হয়ে জারগার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে সক্রিয় ছিলেন।
সাফুরার বোন সামীয়া তাকে অত্যন্ত সাহসী এবং নির্ভীক একজন মানুষ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য, জারগারের মত আরো অনেক মুসলিম ছাত্র-কর্মী রয়েছেন যারা ২৫ মার্চ লকডাউনের পর থেকে কারাগারে আছেন। আন্দোলনরতদের অভিযোগ, সরকার মুক্ত চিন্তা ও মতবিরোধরোধে এই মহামারীটি ব্যবহার করছে।

কোন মন্তব্য নেই