আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই শেয়ারদর বেড়েছে ১০২% - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই শেয়ারদর বেড়েছে ১০২%



চার বছর ধরেই চলতি মূলধন সংকটে রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড। কভিডের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যেই চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তিন গুণ বিক্রয় প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১০২ শতাংশ। কোম্পানিটির মূল্যসংবেদনশীল তথ্য আগাম জেনে কারসাজির মাধ্যমে এর শেয়ারদর বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।


গত বৃহস্পতিবার চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করে ইয়াকিন পলিমারের পর্ষদ। প্রতিবেদন অনুসারে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৯০ লাখ টাকা নিট লোকসান হয়েছিল। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৪ পয়সা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ১২ পয়সা।


এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ইয়াকিন পলিমারের বিক্রি হয়েছে ১১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে নিট লোকসান ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫০ পয়সা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৫৬ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৬২ পয়সায়।


বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এ বছরের ১২ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১২ টাকা ৩০ পয়সা। এর পর থেকেই এর শেয়ারদর বাড়তে থাকে। সর্বশেষ গেল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৯০ পয়সায়। পাশাপাশি এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি কোম্পানিটির ২ লাখ ১৪ হাজার ৮২৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরপর ২৩ জানুয়ারি সবচেয়ে বেশি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৩৫টি শেয়ার লেনদেন হয়। এছাড়া ২৬ জানুয়ারি ৬৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৯টি, ৩ ফেব্রুয়ারি ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৩টি এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ৬৬ লাখ ১২ হাজার ৩১০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ৩১৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সব মিলিয়ে ছয় কার্যদিবসে কোম্পানিটির ৩ কোটি ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪৩ শতাংশের বেশি।


সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ও লেনদেন অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি ইয়াকিন পলিমারকে চিঠি দেয় ডিএসই। এর জবাবে কোম্পানিটি শেয়ারদর ও লেনদেন বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানায়। এর আগে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকার তথ্য জানিয়ে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়ে গত ১৯ জানুয়ারি চিঠি দেয় ডিএসই। ওই চিঠির জবাবে ইয়াকিন পলিমার সে সময় দাবি করে, তাদের কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। সবসময় চালু রয়েছে। তবে কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে চলতি মূলধন সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা বার্ষিক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে অন্যান্য খাত ও প্রতিষ্ঠানের মতো তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে তাদের একজন পরিচালক ও দুই শ্রমিক মারা যান। আক্রান্ত হন অন্যান্য পরিচালক ও কর্মকর্তাও। কোম্পানিটি আরো জানিয়েছে, গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত তারা সীমিত পরিসরে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখে। তবে কখনো পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। করোনা অতিমারীর এ পরিস্থিতির মধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পায়নি। যদিও তারা ২০২০ সাল থেকেই অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি মূলধন সংগ্রহের জন্য কাজ করছে। কিন্তু করোনার কারণে সেটি দ্রুত করা সম্ভব হচ্ছে না।


কোম্পানিটির ব্যবসা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে দাবি করে ওই চিঠির জবাবে ইয়াকিন পলিমার আরো জানায়, তারা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডসহ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে চলতি মূলধন বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই কোম্পানিটির বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলেও জানানো হয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রকাশিত প্রান্তিক ফলাফলে উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তন হলে সেক্ষেত্রে কমিশনের করপোরেট ফাইন্যান্স বিভাগ তা যাচাই-বাছাই করে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। একইভাবে কোম্পানির মূল্যসংবেদনশীল তথ্য আগাম জেনে কেউ সেটিকে ব্যবহার করে কোম্পানির শেয়ারদরকে প্রভাবিত করছে কিনা তা কমিশনের সার্ভিল্যান্স বিভাগ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে। এক্ষেত্রেও কোনো ধরনের কারসাজি পরিলক্ষিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই