জুলাইয়ে চীনের কারখানা কার্যক্রম অপ্রত্যাশিতভাবে সংকুচিত
আবারো সংকোচনে পড়েছে চীনের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম। কভিডের স্থবিরতা কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের সময়ে ফের প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে খাতটি। আগের মাসে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর জুলাইয়ে কার্যক্রম অপ্রত্যাশিতভাবে সংকুচিত হয়েছে। কারণ হিসেবে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিডের নতুন সংক্রমণ এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি এ খাতের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গতকাল প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (এনবিএস) জানিয়েছে, ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) জুলাইয়ে ৪৯ পয়েন্টে নেমেছে। এ হার গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুনেও এ হার ৫০ দশমিক ২ পয়েন্টে ছিল। রয়টার্সের জরিপে বিশ্লেষকরা জুলাইয়ে ৫০ দশমিক ৪ পয়েন্টের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যদিও বেসরকারি কাইশিন/মার্কিট ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই জুনে ৫১ দশমিক ৭ পয়েন্টের কথা জানানো হয়েছিল। জুনে টানা চার মাস পর প্রথমবারের মতো এ খাতের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়। চীনের প্রধান শহরগুলোয় কভিডজনিত লকডাউনের কারণে এ পরিস্থিতির তৈরি হয়েছিল। ৫০ পয়েন্টের নিচে পিএমআই সংকোচন এবং এর ওপরে প্রসারিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
এনবিএসের জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ ঝাও শিং এক বিবৃতিতে বলেন, চীনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাত্রা কমে গিয়েছে। পুনরুদ্ধারের ভিত্তি আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। পেট্রল, রান্নার তেল ও লৌহসংশ্লিষ্ট ধাতুর মতো জ্বালানিনির্ভর শিল্প ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। জুলাইয়ের পিএমআই কমাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে এ খাতগুলো।
উৎপাদন ও নতুন ক্রয়াদেশের সাব-ইনডেক্সগুলো জুলাইয়ে যথাক্রমে ৩ ও ২ পয়েন্ট কমেছে। যেখানে কর্মসংস্থানের উপসূচক দশমিক ১ পয়েন্ট কমেছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি জোন্স ল্যাং লাসালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রধান ব্রুস প্যাং একটি গবেষণা নোটে বলেন, দুর্বল চাহিদা চীনের শিল্পোৎপাদন খাতের পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ধীর ও ভঙ্গুর।
গত মাসে সরকারি শিল্পোৎপাদন খাতের বাইরের পিএমআই জুনের ৫৪ দশমিক ৭ পয়েন্ট থেকে ৫৩ দশমিক ৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে। উৎপাদন ও পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত থাকা সরকারি কম্পোজিট পিএমআই আগের মাসে ৫৪ দশমিক ১ পয়েন্ট থেকে জুলাইয়ে ৫৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। কঠোর লকডাউন পার করে চীনা অর্থনীতি সবেমাত্র পুনরুদ্ধার হচ্ছিল। তার পরও দেশটির শীর্ষ নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীন শূন্য কভিড নীতি অব্যাহত রাখবে। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নীতিনির্ধারকরা চলতি বছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য প্রস্তুত।
জুনে প্রত্যাবর্তনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ফের স্থবিরতার মুখোমুখি হয়েছে। কারণ নতুন করে কভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পর কিছু শহরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি একসময়ের শক্তিশালী রিয়েল এস্টেট খাতের সংকটও ক্রমেই জটিল হচ্ছে।
এদিকে বৈশ্বিক সংকটের অংশ হিসেবে চীনের নির্মাতারাও উচ্চ কাঁচামাল ব্যয় মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি সংস্থাগুলোর মুনাফার মার্জিনও কমিয়ে দিচ্ছে। আবার বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা রফতানির পূর্বাভাসকেও অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই