রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনের আইটি সেক্টর
ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে যুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার এ অভিযোগের পর ইউক্রেনজুড়ে বেসামরিক অবকাঠামোয় রাশিয়ার হামলা বেড়েই চলেছে। এতে বেসামরিক বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সেতু হামলাকে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ বলে আখ্যায়িত করে পুতিন বলেন, ইউক্রেনের গোয়েন্দা বাহিনী রাশিয়ার বেসামরিক অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধ্বংস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। ওই হামলার জেরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও লভিভের মতো শহরগুলোয় হামলা বাড়িয়ে চলেছে রাশিয়া। শহরগুলো মূলত পশ্চিমে তথ্যপ্রযুক্তি হাব হিসেবে কাজ করে। আক্রমণের ফলে তাদের কার্যক্রম বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান সংঘর্ষ সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের পেশাদারদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপদ এলাকা ছিল কিয়েভ ও লভিভ। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলার কারণে সেক্টরটি টিকে থাকার লড়াইয়ে পড়তে পারে।
ওডেসাভিত্তিক একটি আইটি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে কাজ করেন আলেক্সান্ডার রুবান। তাদের কোম্পানিটি যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিষেবা সরবরাহ করে। হামলার ফলে অফিসের কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে কোম্পানিটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টেকটাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের আইটি সেক্টর যুদ্ধের মধ্যে তার উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হলেও চলমান ব্যাঘাতগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ ব্যবসায়িক ক্ষমতাকে আরো সীমিত করতে পারে।
এদিকে ইলোন মাস্ক অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউক্রেনকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দেন, তার প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইউক্রেনে আর ইন্টারনেট সেবা দিতে আগ্রহী নয়।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ইলোন মাস্কের শান্তি প্রস্তাবের সমালোচনা করার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তিনি তার আর্থিক সমর্থন বন্ধ করার হুমকি দেন। এর পর থেকে পরিষেবাটির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো ইউক্রেনীয়দের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে ইন্টারনেটে সংযোগ করার এটিই একমাত্র উপায়।
যুদ্ধের আগে ইউক্রেনের কর্মশক্তির ১ দশমিক ১ শতাংশ আইটি খাতে নিযুক্ত ছিল। চলতি বছর খাতটির বিক্রিও বেড়েছিল। তবে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতি ২০২২ সালে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সংকুচিত হওয়ার পূর্বাভাস দেয়ার ফলে খাতটি বিদেশী নগদ অর্থের উল্লেখযোগ্য একটি উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, আইটি কোম্পানিগুলো বছরের প্রথম আট মাসে পণ্য রফতানি বাবদ বিক্রির মাধ্যমে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে, যা রফতানি আয়ে খাতটির অবদান বাড়িয়েছে ১৪ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল উল্লেখ করেছে যে কিয়েভের যুদ্ধকালীন ঘাটতি মেটাতে আগামী বছর থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ অর্থায়নের প্রয়োজন হবে।
দুই শতাধিক আইটি কোম্পানির একটি গ্রুপ, ইলেভিভ আইটির সিইও স্টেপান ভেসেলভস্কির মতে, সংঘাত সত্ত্বেও তাদের আইটি সেক্টরটি উন্নতি লাভ করেছে।
এক বিবৃতিতে ভেসেলভস্কি বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা ইন্টারনেট বিঘ্নিত হওয়ার কারণে যদিও আমরা ধারাবাহিকতা হারাতে পারি। সেক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আরো বেশি অর্থ চাইতে বাধ্য হব।

কোন মন্তব্য নেই