বিকল্প প্লাটফর্মে ঝুঁকছেন ব্যবহারকারীরা
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলোন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের আলোচনা শুরুর পর থেকেই মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মটিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। গত ২৭ অক্টোবর অধিগ্রহণ সম্পন্নের পর এতে অস্থিরতা চরমে পৌঁছায়। অনেক ব্যবহারকারীই প্লাটফর্মটি ছেড়ে মাস্টোডন, টাম্বলারসহ বিকল্প প্লাটফর্মে পাড়ি জমান।
মোবাইল অ্যাপ বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড, সক্রিয় ব্যবহারকারী ও অ্যাপে ব্যয়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের ১২ দিন পর অ্যাপটিতে গ্রাহক ব্যয় ৬৬ শতাংশ বেড়েছে এবং অ্যাপ ইনস্টলের পরিমাণ বেড়েছে ২১ শতাংশ। বিপরীতে টুইটারের বিকল্প প্লাটফর্মে মাস্টোডনের ইনস্টল বেড়েছে ৬৫৭ শতাংশ।
শুধু মাস্টোডনই নয়, আরো বেশ কয়েকটি প্লাটফর্মে নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্রে টাম্বলার ইনস্টলের পরিমাণ ৯৬ শতাংশ বেড়ে ৯২ হাজারে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক ডাউনলোডের পরিমাণ ৭৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার। বিকল্প সোশ্যাল অ্যাপ হিসেবে পরিচিত কাউন্টারসোশ্যাল যুক্তরাষ্ট্রে ইনস্টল হয়েছে ২৪ হাজার, গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২৩০০ শতাংশ বেড়েছে। বৈশ্বিকভাবে অ্যাপটির ডাউনলোড ৩২০০ শতাংশ বেড়ে ৩৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
টুইটার অধিগ্রহণ চূড়ান্তের প্রথম এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বিকল্প অ্যাপ হিসেবে শীর্ষে উঠে আসে মাস্টোডন ও টাম্বলার। ৩১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ইনস্টল হওয়া অ্যাপের তালিকায় এক নম্বরে ছিল মাস্টোডন, টাম্বলারের অবস্থান ছিল চতুর্থ।
২০১৬ সালের অক্টোবরে তরুণ জার্মান প্রোগ্রামার ইউজেন রোচকো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাস্টোডন চালু করেন। মাইক্রোব্লগিং ফিচারের সঙ্গে এটির ফিচারের মিল রয়েছে। ফলে টুইটার যেসব কাজে ব্যবহার করা হয় মাস্টোডনেও একই কাজ করা যায়। তবে মাস্টোডনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিদ্বন্দ্বী টুইটার বা ফেসবুকের মতো এখনো গড়ে উঠতে পারেনি। এক বার্তায় টুইটার জানায়, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিদিন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৮০ লাখ। আরেকটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক জানায়, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিদিন সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৯৮ কোটি।
সম্প্রতি ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে টুইটার অধিগ্রহণ করেন বিশ্বের অন্যতম ধনী ইলোন মাস্ক। এরপর কর্মী ছাঁটাইসহ বিভিন্ন কারণে আলোচনায় রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। সেন্সর টাওয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বরের মধ্যে টুইটারের মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড হয়েছে ৭৬ লাখ। গুগল প্লে ও অ্যাপ স্টোরে ভোক্তা ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ২ হাজার ডলার। এর আগের ১২ দিনের তুলনায় অ্যাপ ইনস্টল বেড়েছে ২১ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৬ অক্টোবর টুইটার ইনস্টল হয়েছিল ৬৩ লাখ এবং ভোক্তা ব্যয় হয়েছিল ৩ লাখ ৩ হাজার ডলার।
টুইটারকে ঘিরে গত কয়েক সপ্তাহের অস্থিরতা সামনের দিনগুলোতেও বহাল থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন নেতৃত্বের অধীনে নতুন নীতি ও ফিচার চালু করছে মাইক্রোব্লগিং সাইটটি। চলমান অস্থিরতা আরো দীর্ঘায়িত হবে, নাকি কেটে যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নতুন সোশ্যাল অ্যাপগুলো হয়তো সাময়িক সুবিধা পাচ্ছে। তবে বিদ্যমান বড় সোশ্যাল অ্যাপগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকবে কিনা তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই