জিমে দৌড়াও, মাঠে গিয়ে প্রচুর বল করো- তাসকিনকে অ্যামব্রোস - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

জিমে দৌড়াও, মাঠে গিয়ে প্রচুর বল করো- তাসকিনকে অ্যামব্রোস


পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তিনজন। একজনকে আলাদা করা যাচ্ছিল খুব সহজেই। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চির কার্টলি অ্যামব্রোসকে আলাদা করতে খুব বেশি কষ্ট হওয়ার কথা না। সেখানে বাকি দুজনের উচ্চতাও কম নয়। মাশরাফি বিন মুর্তজা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। আরেকজন তাসকিন আহমেদ ১ ইঞ্চি কম। 


উচ্চতায় পার্থক‌্য থাকলেও তিনজনের পরিচয় মিলে গেছে এক বিন্দুতে। তিনজনই দ্রুতগতির বোলার। তবে তাদের আলাদা করেছে সময়, প্রজন্ম। তিনজন তিন সময়কার পেসার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি স‌্যার অ্যামব্রোস আশি-নব্বইয়ের দশকে ব‌্যাটসম‌্যানদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিতেন যখন-তখন। শরীরের ওপর তাক করা বাউন্স,অসহনীয় গতির সঙ্গে খ‌্যাপাটে আক্রমণে অ্যামব্রোস ছিলেন অনন‌্য,অসাধারণ। টেস্টে ৪০৫, ওয়ানডেতে ২২৫ উইকেট যার উজ্জ্বল প্রমাণ। 


মাশরাফি বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতৃত্বে ছিলেন অনেক বছর। ২০০০ সালে তার আগমনে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ভয়ডরহীন ক্রিকেট যাকে বলে, তার শুরুটা করে দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বয়স বেড়েছে। তবুও ক্রিকেটের টানে ছুটছেন ২২ গজে। পড়ন্ত বেলায় যা করে দেখাচ্ছেন সেটাও একেবারে কম নয়। 


তাসকিন আহমেদ বাংলাদেশের পেস ব‌্যাটারি। নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ে লাল-সবুজের পতাকাকে উড়িয়ে নিচ্ছেন বিশ্ব দরবারে। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের বর্তমান ব্যাটন এখন তার হাতেই। ঢাকা এক্সপ্রেস হাসলে হাসে বাংলাদেশ। 


অ‌্যামব্রোস বা মাশরাফির এখন পাওয়ার কিছু নেই। তবে দেওয়ার আছে অনেক কিছু। নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার মহাদায়িত্ব তাদের কাঁধে। সেই কাজটাই তারা করে যাচ্ছেন। সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুজ তাসকিন আহমেদকে পেয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করার পাশাপাশি উপদেশ দিলেন। তা তার জন‌্য নিশ্চিতভাবেই পরম পাওয়া। 


জানা গেছে, মাশরাফির উদ‌্যোগেই তাসকিনের সঙ্গে অ‌্যামব্রোসের আলাপচারিতা। ক‌্যারিবীয় কিংবদন্তির সামান‌্যতম উপদেশ, সান্নিধ‌্য তাসকিনের বড় পরিবর্তন করতে পারে এমন বিশ্বাসে ত্রয়ীর এক হওয়া। যেখানে মন খুলে অ‌্যামব্রোস কথা বলেছেন। তাসকিনকে এগিয়ে যাওয়ার নানা পরামর্শ দিয়েছেন। 


শুরুতেই অ‌্যামব্রোস বলেন, ‘আমি ক্রিকেটারদের বিচার করি সারাবিশ্বে তারা কোথায় কোথায় পারফর্ম করেছে। কেউ কেউ ঘরের মাঠে খুব শক্তিশালী, কিন্তু দেশের বাইরে ভুগতে থাকে। সেরা ক্রিকেটার হতে হলে তোমাকে অবশ‌্যই যেকোনো কন্ডিশনে টিকে থাকতে হবে এবং সারাবিশ্বে ঘুরে ফিরে পারফর্ম করতে হবে। এবং তুমি সঠিক পথেই আছো।’ 


শেষ দুই বছরে তাসকিন নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন‌্য উচ্চতায়। নিজেকে ভেঙে নতুন করে তৈরি করেছেন। লাল ও সাদা বলে নিজেকে শানিত করেছেন। তিন ফরম‌্যাটেই তাসকিন এখন বাংলাদেশের অন্তঃপ্রাণ। সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলছেন নিয়মিত। টানা ব‌্যস্ত থাকায় ফিটনেস থাকতে হবে আপ টু মার্ক। অ‌্যামব্রোস ও মাশরাফি দুজনই পাশের শক্তি বাড়ানো কথা বলেছেন। তাদের দুজনেরই সাফ কথা, ‘প্রচুর দৌড়াতে হবে, প্রচুর বল করতে হবে।’ 


মাশরাফি বলেছেন, ‘আমি ওকে নিশ্চিত করতে বলেছি যে, ও যেন অবশ‌্যই ফিটনেস ঠিক রাখে। ফিটনেস বলতে ওর স্ট্রেন্থ। যেমন ওয়ার্কআউট।’


ফিটনেস নিয়ে অ‌্যামব্রোস খুলে দেন কথার ঝাঁপি, ‘আমি খেয়াল করেছি, অনেক খেলোয়াড় জিমে প্রচুর সময় দেয়। আমার তাতে একটা অভিযোগ আছে। জিমে যাও। নিজেকে শক্তিশালী করো। কিন্তু বডি বিল্ডার হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফাস্ট বোলার হিসেবে তোমাকে সাবলীল এবং নমনীয় থাকতে হবে। ওয়েট ট্রেনিংয়ে তুমি কেবল নিজেকে শক্তিশালী করতে পারো। মনে রাখতে হবে জিমে কেবল প্রচুর দৌড়াতে হবে। মাঠে অনেক বোলিং করতে হবে। জিমে গিয়ে পেশিশক্তি বাড়িয়ে তুমি ফিট হবে, কিন্তু ম‌্যাচে ফিট হওয়ার জন‌্য তোমাকে প্রচুর দৌড়াতে হবে, প্রচুর বোলিং করতে হবে। তাতে তুমি ভেতর থেকে শক্তিশালী হবে। যেটা দিয়ে তুমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুরস্কৃত হবে। আমি বলছি না যে তোমাকে জিমে যেতে হবে না। কিন্ত ওখানে গিয়ে তোমাকে শক্তিশালী হতে হবে। সব সময় মনে রাখবে, প্রচুর দৌড়াতে হবে ও বোলিং করতে হবে।’


সাবেক ক্যারিবিয়ান লিজেন্ড বলেছেন, ‘আমি অনেককে দেখেছি জিমে যাচ্ছে, বডি বানাচ্ছে কিন্তু ৪ ওভার বোলিং করার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। পেসারদের জন‌্য পা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার কাঁধ কখনো ক্লান্ত হবে না। তুমি যদি ক্লান্ত হয়ে যাও তাহলে এক সপ্তাহও বোলিং করতে পারবে না। সেজন‌্য দুই পায়ের শক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তোমার পা যতটা শক্তিশালী হবে তত তুমি শক্তিশালী হবে।’ 


অ্যামব্রোসের পরামর্শ, ‘১০০ মিটার তুমি ১০ সেকেন্ডে শেষ করবে সেটা তোমার কাজ নয়। তোমাকে যেটা করতে হবে প্রচুর দৌড়াতে হবে। শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। পায়ের শক্তি বাড়াতে হবে। যেন দুই পা তোমার শরীরের ওজন বয়ে বেড়াতে পারে। সঙ্গে প্রচুর বোলিং করতে হবে। তুমি নিজেও জানো, কয়েক সপ্তাহ টানা খেলার পর বিশ্রাম করে এসে তোমার শরীরে জড়তা কাজ করে। ওই সময়ে বোলিং করতে মন চায় না। এজন‌্য নিয়মিত বিরতিতে তোমাকে দৌড়াতে হবে ও প্রচুর বোলিং করতে হবে। এটা কখনো ভুলবে না।’

কোন মন্তব্য নেই