বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যয় কমবে
কভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী সময়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের মূল্যমানে উত্থান-পতনসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর থেকেই অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাবে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক ব্যয় কমবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এ কথা জানিয়েছেন। খবর দ্য ন্যাশনাল নিউজ।
এক সাক্ষাৎকারে ক্রফোর্ড ডেল প্রেট জানান, চলতি বছর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি মন্দা শুরু হয় তাহলে এ প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ কমে যাবে।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান কারণ হবে মূল্যস্ফীতি। আর এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’ ডেল প্রেট বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পাশাপাশি ভূরাজনৈতিক সমস্যা, চীনের কভিড-১৯ বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে চাহিদাও বাড়বে। এসব বিষয় সম্মিলিতভাবে মূল্যস্ফীতির পরিবেশ তৈরি করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যয় প্রভাবিত হওয়ার বড় বিষয় হচ্ছে ডলার ব্যবহারের বিষয় নাগালের বাইরে চলে যাবে। বিশেষ করে পণ্যের দাম, পরিষেবা ও বিদ্যুৎ’ব্যয় পরিশোধে কোম্পানিগুলো যে ব্যয় করে থাকে। এসব বিষয়ের কারণে আইটি খাতে ব্যয় কমতে পারে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ডিজিটাল পরিবর্তনের ভূমিকার বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও এন্টারপ্রাইজ বাহবা দিচ্ছে। কেননা আগামী বিশ্ব প্রযুক্তির মাধ্যমেই পরিচালিত হবে। একই সময়ে উদ্ভাবনে আরো ব্যয়ের বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে। কেননা ম্যাক্রো অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো বিনিয়োগ উদ্যোগকে প্রভাবিত করছে।
উচ্চমূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানার জন্য চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার করহার আরো ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। ২০২২ সাল থেকে এ নিয়ে আটবার এ হার বাড়ানো হলো। সামনে এটি আরো বাড়বে বলেও জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও মন্দা সম্পর্কে সচেতন করেছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে এবং ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে। যেখানে ২০২২ সালে এর হার ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার আগের ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনকে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দামও নাগালের বাইরে চলে গেছে। তবে এক বছরে দুটি দেশ অনেকটাই স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ডেল প্রেট বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি চালু করতে হবে। যেটি শুধু ব্যবসাসংক্রান্ত সমস্যার সমাধানই করবে না, পাশাপাশি গ্রাহক থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে আরো সুযোগ তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রযুক্তি খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এন্টারপ্রাইজগুলোকে অবশ্যই এটি ব্যবহার করতে হবে। কেননা এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর লস কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে এবং কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে।’
অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি কর্মীদের আরো দক্ষ করে তুলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে আগ্রহী নয়। সময়ের সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা ও উপযোগিতা গুরুত্ব হারাবে বলেও জানান ডেল প্রেট। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এমন আর কোনো প্রযুক্তি যেগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমরা নতুন যুগের দ্বারপ্রান্তে আছি।’
আইডিসির হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, ২০২৬ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক ব্যয় ৩০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা ২০২২ সালের ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের তুলনায় ১৫৪ শতাংশ বেশি। এটি ২০২২-২৬ সালের মধ্যে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশের একটি চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক হার, যা একই সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী আইটি খাতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয়ের পূর্বাভাসের তুলনায় চার গুণ বেশি।
ডেল প্রেট বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার কারণে কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ কমবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন ব্যবসায়িক ইউনিট চালু হবে। আর সে সব খাতে প্রচুর কর্মীর প্রয়োজন হবে।’
আইডিসির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মনে হয় না আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। তবে মানুষ এর সক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাবে।’
কোন মন্তব্য নেই