স্লুইস গেট নষ্ট, পানিশূন্য ৩০ কিলোমিটার খাল - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

স্লুইস গেট নষ্ট, পানিশূন্য ৩০ কিলোমিটার খাল


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের মালভাঙ্গা স্লুইস গেটের ১৬টি কপাটের সবক’টিই নষ্ট। ফলে স্লুইস গেটটি কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করতে পারছে না কুড়িগ্রামের রাজারহাটের দেউলিয়া থেকে সদর উপজেলার দুধখাওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার (দেউলিয়া-দুধখাওয়া) খাল। পানি না থাকায় খালের দুই পাড়ের বোরো ফসলে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষককে। এতে উৎপাদন ব্যয়ের পাশাপাশি চাপ বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নে ধরলা নদীর বাঁধের ওপর তৈরি মালভাঙ্গা স্লুইস গেট। ১৬ ভেন্ট বা কপাটের এ স্লুইস গেটটি কৃষকের সেচ সুবিধা দিতে দেউলিয়া-দুধখাওয়া খালের মুখে আশির দশকে নির্মাণ করা হয়। রাজারহাট উপজেলা থেকে উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি। এ খালের পানি দিয়ে দুই পাড়ে বোরো মৌসুমে সেচকাজে ব্যবহার করা হতো। অন্যদিকে বন্যার পানি থেকে ফসল রক্ষায়ও ব্যবহার হতো স্লুইস গেটটি। চল্লিশোর্ধ্ব এ গেটটির সব কপাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোনো কাজেই আসছে না এটি।  


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের সড়া মৌজার বাসিন্দা শহীদ আলী বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ বছর। আমি জন্মের পর থেকে এ খাল দেখে আসছি। আগে পানি থাকত সারা বছর। এখন শুকনো মৌসুম আসার আগেই শুকিয়ে যায়। আগে এ খালের পানি দিয়ে বোরো আবাদ হতো শত শত হেক্টর জমিতে। কিন্তু এখন আর পানি পাওয়া যায় না। এ খালের একেবারে ভাটিতে স্লুইস গেটটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর পানি থাকছে না।’


সদর উপজেলার স্লুইস গেট এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, বর্ষার সময় দেউলিয়ার বিলসহ ভাটির দিকের আরো কয়েকটি বিলের পানি এ খাল দিয়ে ধরলায় গিয়ে পড়ে। কিন্তু শুকনো মৌসুমে পানি ধরে রাখতে এবং বন্যার সময় যাতে ধরলার পানি খালে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ১৫ বছর ধরে মেরামতের অভাবে এটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড এটি নির্মাণ করলেও মেরামতের আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।


খালের দুই পাড়ের কৃষক বলেন, ‘‌আগে আমরা ৩০ কিলোমিটার এলাকার দুই পাড়ের কৃষকরা খালের পানি দিয়ে বোরো আবাদ করতাম। এখন ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। স্লুইস গেটটি মেরামত করা হলে খালের পানি দিয়েই বোরো আবাদ করতে পারব।’


স্থানীয়রা জানান, স্লুইস গেটটি অকার্যকর হওয়ায় এ খাল দিয়ে একদিকে বর্ষা মৌসুমে ধরলা নদীর পানি প্রবেশ করে নষ্ট করে জমির ফসল, অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করতে না পারায় বোরো খেতে সেচ দেয়া যায় না। একসময় এ খালটি তিন উপজেলার অনেক মানুষের জীবন-জীবিকার কাজে লাগলেও এখন তা শুধুই অতীত।


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাজারহাটের দেউলিয়ার বিল থেকে সদর উপজেলার দুধখাওয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটির দুই পাড়ের ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় আশির দশকে স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়। খালের শেষ প্রান্তে ধরলা নদীর বাঁধে নির্মাণ করা স্লুইস গেটটি মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা তেমন পানি ধরে রাখতে পারছে না। তবে স্লুইস গেটটি যাতে আগের মতো কৃষকের উপকারে আসে সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই