মন্দা কাটাতে চিপ উৎপাদন কমাচ্ছে স্যামসাং
কভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চিপের চাহিদা বাড়ে। বিভিন্ন পণ্যের দামও বাড়তে থাকে। মহামারী-পরবর্তী চাহিদা কমার পাশাপাশি বিক্রিতেও ভাটা পড়ে। বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চিপ উৎপাদন কমালেও স্যামসাং বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি ও বাজার অনুকূলে না থাকায় এবার উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্টটি। খবর রয়টার্স।
সর্বশেষ প্রান্তিকে মুনাফা ৯০ শতাংশের বেশি পতনের কারণে হঠাৎ করেই উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি। সম্প্রতি নীতি নির্ধারকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে স্যামসাং জানায়, কয়েকটি মেমরি চিপ উৎপাদন অর্থপূর্ণ মাত্রায় কমাতে যাচ্ছে তারা। অবশ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, মুনাফা কমার কারণে উৎপাদন কমানো হচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। গত নয় মাসে চিপের দাম যে ৭০ শতাংশ পতন হয়েছে তা মোকাবেলায় এ পথে এগুচ্ছে স্যামসাংয়ের মতো চিপ নির্মাতা জায়ান্টগুলো।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় ভোক্তা চাহিদা বাড়ায় স্মার্টফোন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কম্পিউটার উৎপাদনকারীরা চিপের মজুদ বাড়িয়েছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে গ্রাহক এ ধরনের পণ্য ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলোর চিপের চাহিদাও প্রতিনিয়ত কমছে।
স্যামসাং বলছে, শ্লথগতির বিশ্ব অর্থনীতির কারণে তাদের মেমরি চিপের চাহিদা কমেছে। এতে স্মার্টফোন ও পিসি নির্মাতা কোম্পানিগুলো নতুন চিপ ক্রয় কমিয়ে মজুদের ওপর নির্ভর করছে। তবে স্যামসাংয়ের চিপ উৎপাদন কি হারে কমানো হচ্ছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এর আগে এসকে হাইনিক্স ও মাইক্রনের মতো প্রতিষ্ঠান চিপ উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল।
দাইশিন সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক জন পার্ক বলেন, ‘এসকে হাইনিক্স ও মাইক্রনের মতো প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমানোর কথা জানালেও, স্যামসাং কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার এ প্রতিষ্ঠানও উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিল।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি উৎপাদন কমানোর এ সিদ্ধান্ত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মেমরি চিপের চাহিদার বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।’ তবে উৎপাদন কমানোর হার খুবই সামান্য বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কেননা ভবিষ্যতে চিপ উৎপাদন ও এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ এবং গবেষণায় বড় ধরনের বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে স্যামসাং।
অন্যদিকে ২০২২ সালের অক্টোবরে এসকে হাইনিক্স জানিয়েছিল, চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটি তাদের মূলধন ব্যয় অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে আনবে। যেখানে মাইক্রন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তাদের বিনিয়োগ ৩০ শতাংশ কমিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ এজেন্সির বরাতে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা হতে পারে ৬০ হাজার কোটি ওন বা ৪৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ১৪ দশমিক ১২ ট্রিলিয়ন ওন। প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা প্রায় ৯৬ শতাংশ পতন হয়েছে। স্যামসাংয়ের বিক্রি ১৯ শতাংশ কমে ৬৩ ট্রিলিয়ন ওনে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ ট্রিলিয়ন ওন।
কোন মন্তব্য নেই