ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর উত্তোলন: পরিবেশ ও নদীর জন্য এক নীরব হুমকি
সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকা দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক পাথর ভান্ডার। পাহাড়ি ঝরনা, স্বচ্ছ নদী এবং সাদা পাথরের সমাহার শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়, বরং পর্যটনের জন্যও অমূল্য। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ পাথর উত্তোলন এই অঞ্চলের পরিবেশ ও নদীর প্রবাহকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে।
পরিবেশের ক্ষতি
নদীর তলদেশের ক্ষয়: অতিরিক্ত পাথর তোলায় নদীর তলদেশ গভীর গর্তে পরিণত হচ্ছে, ফলে স্রোতের গতি বাড়ছে এবং তীরভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস: মাছের প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে, শামুক, কাঁকড়া, জলজ উদ্ভিদ ও প্ল্যাঙ্কটনের অস্তিত্ব হুমকিতে পড়ছে। এতে পুরো খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যাচ্ছে।
পানি দূষণ ও ঘোলা হয়ে যাওয়া: ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে পানিতে মাটি ও ধূলিকণা মিশে গিয়ে পানি ঘোলা হয়ে পড়ছে।
ভূমিকম্প ঝুঁকি বৃদ্ধি: নদীর পাথর ও নুড়ি প্রাকৃতিকভাবে ভর ধারণে সাহায্য করে। অতিরিক্ত উত্তোলন ভূগর্ভস্থ গঠন দুর্বল করে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
নদীর উপর প্রভাবের ধরন
ক্ষতির ধরন | প্রভাব |
---|---|
তলদেশ ক্ষয় | প্রাকৃতিক গঠন নষ্ট, স্রোতের দিক পরিবর্তন |
তীর ভাঙন | স্রোতের চাপ তীরে গিয়ে কৃষিজমি হারানো |
স্রোতের গতি পরিবর্তন | বন্যা বা জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বৃদ্ধি |
পলি জমার ভারসাম্য নষ্ট | পলি চক্র ভেঙে গিয়ে ডাউনস্ট্রিম এলাকায় ক্ষয় |
জলজ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস | শামুক ও মাছের আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে যাওয়া |
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
-
পর্যটন হ্রাস: পানির স্বচ্ছতা নষ্ট হলে পর্যটকের সংখ্যা কমবে।
-
মৌসুমি বন্যা: তলদেশ গভীরতা পরিবর্তনে হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি বাড়বে।
-
প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট: সেডিমেন্ট ও পাথরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে যাবে।
করণীয় ও সুপারিশ
-
নিয়ন্ত্রিত উত্তোলন: বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা করে সীমিত পাথর উত্তোলন।
-
ডিজিটাল নজরদারি: ড্রোন, জিপিএস ট্র্যাকিং ও লাইসেন্স যাচাই।
-
কমিউনিটি সচেতনতা: স্থানীয়দের পরিবেশ রক্ষায় সম্পৃক্ত করা।
-
বিকল্প জীবিকা: উত্তোলন নির্ভর শ্রমিকদের অন্য কাজে নিয়োগ।
-
আইন প্রয়োগ জোরদার: অবৈধ উত্তোলনে দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা।
উপসংহার:
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর দেশের এক মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর সঠিক ব্যবহার অর্থনীতি ও পর্যটনে অবদান রাখলেও নিয়ন্ত্রণহীন উত্তোলন চলতে থাকলে নদী ও পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তাই এখনই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
কোন মন্তব্য নেই