এইচএসসির ভয়াবহ ফল: শেখার সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে? - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

এইচএসসির ভয়াবহ ফল: শেখার সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে?

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত



এইচএসসির ভয়াবহ ফল: শেখার সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা কোন পথে?

নিজস্ব প্রতিবেদক || টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৩:০৭ | আপডেট: ০৩:১৩

দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে হতাশাজনক ফল নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফল। গত ২১ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম পাসের হার—মাত্র ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য।

শুধু তাই নয়, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ভয়াবহভাবে কমে গেছে। গত বছর যেখানে ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, এবার সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৬৩ হাজার ২১৯ জনে।

📉 দুই দশকের ফলাফলের ওঠানামা

ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে এইচএসসিতে পাসের হার ছিল ৫৯ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১০ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তা গড়ে ৭৫–৮০ শতাংশে ঘোরাফেরা করেছিল।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে ‘বিশেষ মূল্যায়ন পদ্ধতি’ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্রে পাসের হার ৯০ শতাংশ ছাড়ালেও এবার তা নেমে এসেছে ভয়াবহ নিম্নস্তরে।

২০২৫ সালের এই ফল ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন—শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটি এক বড় সতর্ক সংকেত।

📘 ইংরেজি ও আইসিটিতে বেশি ফেল

শিক্ষা বোর্ডের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়েই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য।
শিক্ষকরা বলছেন, অনলাইন শিক্ষার প্রভাব, মৌলিক শেখার দুর্বলতা ও হঠাৎ পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের কারণে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

এ বছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেমে এসেছে ১,৩৮৮ থেকে মাত্র ৩৪৫-এ।
অন্যদিকে, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০২-এ, যা গত বছর ছিল মাত্র ৬৫টি।

🧩 শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ, স্বীকার করছেন বোর্ড চেয়ারম্যান

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন,

“আমরা যেন এক আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি—যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ আছে। সেই গলদ চিহ্নিত করে সংশোধন করতে হবে। দায় শুধু শিক্ষকদের নয়, আমাদের সবার।”

🧠 শেখার মানে বিপর্যয়, বলছেন বিশ্লেষকরা

শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফলাফল শুধু নম্বরের ব্যর্থতা নয়—এটি শিক্ষাব্যবস্থার গভীর শেখার সংকটের প্রতিফলন।
প্রাথমিক স্তর থেকেই শেখার দুর্বলতা, শিক্ষক প্রশিক্ষণের ঘাটতি, কোচিং নির্ভরতা এবং মুখস্থ শিক্ষার সংস্কৃতি—সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস্তবভিত্তিক মূল্যায়নে ব্যর্থ হচ্ছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেন,

“আমরা এমন এক সংস্কৃতি তৈরি করেছি যেখানে পাসের হারই সাফল্যের মাপকাঠি। কিন্তু শেখার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে শেখার মান উন্নয়নের সংস্কৃতি গড়ে তোলার।”

😔 শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুখে হতাশা

ফল প্রকাশের পর রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে দেখা গেছে হতাশার চিত্র।
ভিকারুননিসা নূন কলেজের শিক্ষার্থী সামিরা সোয়া বলেন,

“ইংরেজি পেপারটা অনেক কঠিন ছিল। আমরা ভাবিনি এমন ফল হবে।”

একজন অভিভাবক বলেন,

“অনলাইন ক্লাসের ঘাটতি এখনো পূরণ হয়নি। বোর্ডের উচিত শিক্ষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া।”

⚠️ কাঠামোগত দুর্বলতা ও নেতৃত্বের ঘাটতি

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দীপকেন্দ্র নাথ দাস বলেন,

“২০২৫ সালের ফলাফল ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কার্যকর নেতৃত্ব ও নীতিমালা না থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট দেখা দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন,

“বর্তমানে অনেক শিক্ষক ক্লাসে মনোযোগ দেন না, শিক্ষার্থীরাও কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ছে। এটি প্রকৃত জ্ঞানের বিকাশ ঘটাচ্ছে না।”


📌 সারকথা:

২০২৫ সালের এইচএসসি ফলাফল শুধু হতাশার গল্প নয়, এটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ‘রেড অ্যালার্ট’।
এখন প্রয়োজন সংখ্যার নয়, মানসম্মত শেখার সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

কোন মন্তব্য নেই