কক্সবাজারে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ছে: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিরোধের করণীয়

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
কক্সবাজারে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ছে: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিরোধের করণীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
রাতভর টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসে কাদা-পানির স্রোত। মুহূর্তেই মাটি ধসে চাপা পড়ে ঘরবাড়ি ও প্রাণহানি ঘটে। বর্ষা মৌসুমে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা কক্সবাজারে প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় কাটার পাশাপাশি নির্বিচারে বসতি স্থাপন ও বন উজাড়ের কারণেই এ বিপর্যয় দিন দিন বাড়ছে।
ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বাড়ছে
তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের পাহাড়চূড়া ও পাদদেশে বর্তমানে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। শহরের ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলী, কলাতলী, সাহিত্যিকাপল্লী, লারপাড়া ও চন্দ্রিমা হাউজিংসহ ২০টিরও বেশি এলাকায় পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
গত এক দশকে জেলায় ২১টি পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। এর মধ্যে ২৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ১৯ জন আশ্রিত রোহিঙ্গা। আরও ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
কেন হয় পাহাড়ধস
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন জানান, অবিরাম বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির নিচের স্তর পানিতে ভিজে আঠালো হয়ে যায়। তখন মাটি নিজের ওজন ধরে রাখতে না পেরে গড়িয়ে পড়ে। এছাড়া পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ ও গাছ কেটে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা পাহাড়ধসের অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, “গাছের শিকড় মাটিকে শক্তভাবে আঁকড়ে রাখে। কিন্তু বন উজাড় হলে মাটির স্তর দুর্বল হয়ে পড়ে। শুকনো অবস্থায় মাটি শক্ত মনে হলেও ভেতরে ফাঁপা থাকে। একটানা বৃষ্টিতে সেই আলগা স্তর ভেঙে পড়ে, ফলে পাহাড়ধস ঘটে।”
পরিবেশ ও জীবন—দুইই ঝুঁকিতে
স্থানীয়দের অভিযোগ, পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণের ফলে বৃষ্টির সঙ্গে মাটি শহরের নালা-নর্দমায় জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এতে নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনও ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ধস শুধু প্রাণহানিই ঘটাচ্ছে না, বরং স্থানীয় জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস করছে।
করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
-
পাহাড় কাটা ও অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ করতে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
-
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে মানুষকে দ্রুত সরিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে।
-
বন পুনরুদ্ধার ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি জোরদার করতে হবে।
-
পাহাড়ধস পূর্বাভাসের জন্য সেন্সরভিত্তিক “আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম” চালু করা যেতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসনও বলছে, সচেতনতা ও আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পাহাড়ধসের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
কক্সবাজারবাসীর প্রত্যাশা—প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় ঠেকাতে সরকার ও স্থানীয় জনগণ একসাথে কাজ করবে, যাতে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে।
কোন মন্তব্য নেই