সৌর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পিছিয়ে আফ্রিকা
সৌর ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও পিছিয়ে আফ্রিকা
প্রকাশ: সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৩ অপরাহ্ন
ছবি: এপি
আফ্রিকা পৃথিবীর অন্যতম জ্বালানি সম্পদসমৃদ্ধ মহাদেশ। উত্তরে, পশ্চিমে ও পূর্বে রয়েছে বিশাল গ্যাসক্ষেত্র; দক্ষিণে কয়লা ও জলবিদ্যুতের বিপুল সম্ভাবনা। আবার সাহারা, নামিব ও কালাহারি মরুভূমি সৌরশক্তির এক অফুরন্ত ভাণ্ডার। নবায়নযোগ্য শক্তির এ প্রাচুর্য কাজে লাগাতে পারলে আফ্রিকা হতে পারত বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী অঞ্চল। কিন্তু বাস্তবে সে সম্ভাবনা এখনো অধরা।
বিশাল সম্ভাবনা, সীমিত ব্যবহার
নেদারল্যান্ডসের তুলনায় আফ্রিকা দ্বিগুণ সূর্যালোক পায়, জনসংখ্যা প্রায় ৯০ গুণ বেশি, আয়তনেও ৮০০ গুণ বড়। তবুও মহাদেশটির মোট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ইউরোপের ক্ষুদ্র এই দেশটির চেয়েও কম। উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকার কয়েকটি উন্নত অঞ্চল ছাড়া অধিকাংশ দেশেই বিদ্যুৎ গ্রিড দুর্বল, যার ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি আফ্রিকার অর্থনীতি ও মানব উন্নয়নকে পিছিয়ে রাখছে।
পুরোনো অবকাঠামো ও নীতিগত দুর্বলতা
১৯৫০-৭০-এর দশকে নির্মিত মিসরের আসওয়ান হাই ড্যাম, জাম্বিয়ার কারিবা বা ক্যামেরুনের বামেনজিংয়ের মতো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বর্তমানে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। বৃষ্টিপাত ও নদীর প্রবাহ অনিশ্চিত হওয়ায় উৎপাদনও অস্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফ্রিকার বিদ্যুৎখাতে বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে দুর্বল নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ মূলধনি ব্যয়।
ডিজেল নির্ভরতা ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ
অপর্যাপ্ত গ্রিডের কারণে বর্তমানে আফ্রিকায় প্রায় ১০০ গিগাওয়াট ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার হচ্ছে। এর দুই-তৃতীয়াংশ সরবরাহ যায় বড় শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু এই জেনারেটর ব্যয়বহুল ও দূষণকারী—যা দীর্ঘমেয়াদে শিল্পায়নের জন্য টেকসই সমাধান নয়।
উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নত বাজার বাদ দিলে বাকি ৪৮টি আফ্রিকান দেশে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার ইউরোপের মাত্র ১ শতাংশ।
চীনা সৌর প্যানেলের উত্থান
তবে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু গবেষণা সংস্থা এম্বারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত আফ্রিকায় চীনা সৌর প্যানেল আমদানি পাঁচ গুণ বেড়েছে। শুধু আগস্টেই এসেছে ১.৭৪ গিগাওয়াট প্যানেল।
চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে আফ্রিকা এখন হয়ে উঠছে সস্তা চীনা প্যানেলের অন্যতম বাজার। নাইজেরিয়া এখন মিসরকে ছাড়িয়ে মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সৌর প্যানেল আমদানিকারক দেশ।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, আফ্রিকায় সৌরশক্তিকে টেকসই করতে হলে এটি ব্যাটারি, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও ভূতাপীয় শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এতে নিরবচ্ছিন্ন ও পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
চীনা উৎপাদন, স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন অর্থায়নের সমন্বয়ে মহাদেশজুড়ে ছোট ছোট সৌর প্রকল্প (মিনি-গ্রিড) শুরু হয়েছে, যা গ্রামীণ বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এগুলোকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থায়নের খরচও একটি প্রধান বাধা—যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের নবায়নযোগ্য প্রকল্পে সুদহার ৪.৫%, সেখানে আফ্রিকায় তা ১১% পর্যন্ত।
সব মিলিয়ে, নবায়নযোগ্য শক্তির অফুরন্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নীতি, অর্থায়ন ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে আফ্রিকা এখনো বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না।

কোন মন্তব্য নেই