কাল থেকে সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠছে, তবে জাহাজ চলবে কি?
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
কাল থেকে সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠছে, তবে জাহাজ চলবে কি?
টাইমস এক্সপ্রেস ২৪ | প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫
টানা নয় মাস পর অবশেষে আগামীকাল (১ নভেম্বর) সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠছে। সরকার এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া নামে দুটি জাহাজকে কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন এই দুই জাহাজে।
তবে রাত কাটানোর অনুমতি না থাকায় পর্যটকদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। দিনে গিয়ে মাত্র এক ঘণ্টা ঘুরে আবার ফেরত আসতে হবে বলে অনেকেই যাত্রা বাতিল করেছেন।
জাহাজ চলবে কি না, সংশয়ে পর্যটকরা
সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, “কক্সবাজার শহর থেকে নুনিয়াছটা ঘাট হয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে সময় লাগে ১৩–১৪ ঘণ্টা। এতে দ্বীপে ঘোরার সময় পাওয়া যায় মাত্র এক ঘণ্টা। ফলে পর্যটকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতার একটি জাহাজ চালাতে খরচ হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু টিকিট বিক্রি থেকে আয় হবে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ। প্রতিদিন সাত–আট লাখ টাকা লোকসান দিয়ে জাহাজ চালানো সম্ভব নয়।”
পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, উখিয়ার ইনানী সৈকতের নৌবাহিনীর জেটি ব্যবহার করতে পারলে দিনে গিয়ে দিনে ফেরত আসা সম্ভব হতো। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটি করা যাচ্ছে না।
নভেম্বর মাসে দিনভিত্তিক ভ্রমণ, রাত যাপন নিষিদ্ধ
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধুমাত্র দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত যাপনের অনুমতি থাকবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময়ে কক্সবাজারের নুনিয়াছটা জেটি থেকেই কেবল জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। টিকিট কিনতে হবে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টাল থেকে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে—যা ছাড়া টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে।
পরিবেশ রক্ষায় কঠোর নির্দেশনা
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে—
-
রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো বা শব্দ সৃষ্টি নিষিদ্ধ
-
বারবিকিউ পার্টি ও মোটরচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ
-
কেয়াবন ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কেয়া ফল সংগ্রহ, কাছিম, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ধরা নিষিদ্ধ
-
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে
তিন বছর আগের তুলনায় পর্যটন কমে গেছে
কয়েক বছর আগেও টেকনাফ থেকে দৈনিক পাঁচ–ছয় হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতেন ৯–১১টি জাহাজে। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অস্থিতিশীলতা, নাফ নদীতে গুলিবর্ষণ ও অপহরণের ঘটনার কারণে ২০২৪ সালের শুরু থেকে রুটটি বন্ধ থাকে।
এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে আছে। পর্যটকরা এখন কক্সবাজার থেকে সাগরপথে দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে দ্বীপে যাচ্ছেন, ফলে ভ্রমণের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের প্রকল্প চলছে
পরিবেশ অধিদপ্তর বর্তমানে “সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন প্রকল্প” বাস্তবায়ন করছে। ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এই প্রকল্পে পরিবেশ সংরক্ষণ, কাছিম সংরক্ষণ, কেয়াবন পুনর্গঠন ও দ্বীপের দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয় এবং ২০২৩ সালে ১,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেয় পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
কোন মন্তব্য নেই