একমি পেস্টিসাইড শেয়ার কেলেঙ্কারি: বিএসইসিতে নতুন উত্তাপ, দুদকে যাচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদন
তারিখ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, সময়: ১৮:৪৭
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেয়ারবাজারে আলোচিত একমি পেস্টিসাইড লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু নিয়ে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-তে। প্রাথমিক তদন্ত শেষ করে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
তবে, দুদকে পাঠানোর আগেই অভিযুক্ত চার বিনিয়োগকারী নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ চেয়ে কমিশনে আবেদন করেছেন। তারা হলেন—
বেঙ্গল অ্যাসেট হোল্ডিংস লিমিটেড, চট্টগ্রাম প্লাস্টিক অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারী রুহুল আজাদ।
তাদের দাবি, তারা নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি মূল্যে শেয়ার কিনেছেন, অথচ বিএসইসি তাদের ব্যাখ্যা না নিয়েই সিদ্ধান্ত দিয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মাহমুদা শিরীন-এর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
অনিয়মের অভিযোগ
তদন্ত সূত্রে জানা যায়, প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর সময় অর্থ জমা না দিয়েই শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় একমি পেস্টিসাইডের পরিচালনা পর্ষদের ছয়জনসহ মোট ১৫ ব্যক্তি ও ছয় প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিএসইসি।
অভিযোগ রয়েছে, তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা তিন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা গ্রহণ করেন। এসব অর্থের একটি বড় অংশ কোম্পানির ব্যাংক হিসাবের বাইরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান সিনহা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজা এবং তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।
এই অর্থের বিপরীতে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৯টি শেয়ার (বোনাসসহ) ইস্যু করা হয়, যার মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ আছে।
বিএসইসির বক্তব্য
বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন,
“আমাদের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে—কেউ কেউ ভুয়া ব্যাংক ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে, কেউ আংশিক টাকা দিয়েছে, আবার কেউ এক টাকাও না দিয়ে শেয়ার বরাদ্দ নিয়েছে। বিষয়টি দুদকে পাঠানো হয়েছে। তবে যারা প্রকৃত অর্থ পরিশোধ করেছে, তাদের রিভিউয়ের সুযোগ থাকবে।”
অভিযুক্তদের তালিকা
বিএসইসির ৯৭৩তম কমিশন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু ওই চার বিনিয়োগকারীই নয়—কোম্পানি সংশ্লিষ্ট আরও ছয় পরিচালক ও কর্মকর্তাসহ আলোচিত ‘ছাগলকাণ্ডের’ মতিউর রহমানসহ মোট ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করে দুদকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন—
চেয়ারম্যান শান্তা সিনহা,
ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজা-উর-রহমান সিনহা,
পরিচালক আহসান হাবিব সিনহা, কে এম হেলুয়ার,
কোম্পানি সচিব সবুজ কুমার ঘোষ,
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজা।
ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন—মতিউর রহমান, মো. আফজাল হোসাইন, তোফাজ্জল হোসাইন ফরহাদ, জাবেদ এম মতিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শেখ মোহাম্মদ সরোয়ার, তৌহিদা আক্তার ও রানা ইসলাম।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে—এসকে টিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিক্রমপুর পটেটো ফ্লেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
কোম্পানির পটভূমি
১৫০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের মধ্যে একমি পেস্টিসাইড লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধন ১৩৫ কোটি টাকা।
‘বি’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটি ২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং ৩ কোটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানির তহবিল ব্যবহারে অনিয়ম ও স্বচ্ছতার ঘাটতি নিয়ে বিতর্ক চলছেই।
📍 সূত্র: টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
কোন মন্তব্য নেই