ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের করহার নিয়ে অস্পষ্টতা
সেবার নাম ভিন্ন দেখিয়ে ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চিঠির অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে দুই রকম হারে কর দিচ্ছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থা। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ। সম্প্রতি এ করহার স্পষ্ট করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এনবিআরের দুটি চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এনবিআরের চিঠি অনুযায়ী অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্রডকাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ হারে কর নির্ধারিত হলেও রেমিট্যান্স দেয়ার সময় কিছু প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা সেবার নাম ভিন্ন উল্লেখ করছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক কিছু গ্রাহকের থেকে গুগল এশিয়া প্যাসিফিক পিটিই লি. ও মেটার অনুকূলে রেমিট্যান্স পাঠানোর সময় ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। এছাড়া একটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তাদের দুটি ভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে একই ধরনের সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন রেটে কর কাটা হচ্ছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গুগল, মেটা বা এ-জাতীয় অন্যান্য প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুকূলে রেমিট্যান্স পাঠানোর সময় এশিয়া মার্কেটিং লিমিটেড, এশিয়াটিক মাইন্ডশেয়ার লিমিটেড, হ্যাভাস মিডিয়া লিমিটেড ও অ্যাক্সিয়েটা ডিজিটাল বাংলাদেশ লিমিটেডসহ অনেক বিজ্ঞাপনদাতা সংস্থা ১৫ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। অপরদিকে একই ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচারকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মিডিয়াকম লিমিটেড, এইচটিটিপুল বাংলাদেশ লিমিটেড এবং গ্রামীণফোন ইত্যাদি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দুটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০ শতাংশ হারে কর দিচ্ছে। ভিন্ন হারে কর দেয়ার ক্ষেত্রে কেউ এ সেবাকে ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে উল্লেখ করছে আবার কেউ কেউ এটাকে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্রডকাস্টিং হিসেবে উল্লেখ করছে। ফলে এ খাতে রেমিট্যান্স আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে কর কর্তনের ভিন্নতার জন্য অনুমোদনও ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করের হারের ক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্য থাকা উচিত না। সবার ক্ষেত্রে করের হারটা একই হওয়া উচিত। যেহেতু ডিজিটালেও এটা বিজ্ঞাপন হিসেবে যাচ্ছে তাই এটা এনবিআরের উচিত বিষয়টি পরিষ্কার করা। করের হার নির্ধারণ করে এনবিআর প্রয়োজন হলে প্রত্যেক ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেবে। আর যেহেতু রাজস্ব হারানোর একটা অভিযোগ এসেছে, তাহলে এটাও খতিয়ে দেখতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘টেলিভিশন বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে সেগুলো অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ব্রডকাস্টিং হিসেবে ধরা হবে। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেসব মাধ্যম চালানো হয় যেমন ফেসবুক বা গুগলে যদি কোনো বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তাহলে সেটা ডিজিটাল মার্কেটিং হিসেবে গণ্য হবে। এজন্য আলাদা কর হার আইন অনুযায়ী ঠিক করা আছে। এ বিষয়টি আগেও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহে আবার চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে দেয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই