যুক্তরাষ্ট্রের ফিনটেক খাতে অ্যাপলের বাজার বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনলাইন কেনাকাটায় জনপ্রিয়তা বাড়ছে অ্যাপলের। ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে প্রযুক্তি জায়ান্টটি সম্প্রতি ‘বাই নাউ, পে লেটার’ পরিষেবা চালু করেছে। এ পরিষেবার সংক্ষিপ্ত নাম বিএনপিএল। পরিষেবাটির মাধ্যমে ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে কেনাকাটা করা যায়। বর্তমানে খাতটিতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান অ্যাফার্ম হোল্ডিংস এবং সুইডিশ কোম্পানি ক্লারনার মতো সংস্থাগুলো নেতৃত্ব দিচ্ছে। অ্যাপলের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটির ফাইন্যান্সিয়াল টেকনোলজি তথা ফিনটেক সেক্টরের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে। খবর রয়টার্স।
মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টটি জানিয়েছে, অ্যাপল পে লেটার নামের পরিষেবাটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ছয় সপ্তাহের জন্য চারটি ক্রয় সম্পন্ন করতে পারবেন। কোনো ধরনের সুদ বা ফি ছাড়াই এ লেনদেন করা যাবে। প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারকারীর জন্য এটি চালু করা হবে। তবে কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অ্যাপলের তথ্যানুযায়ী, যেসব ব্যবসায়ী ‘অ্যাপল পে’ থেকে লেনদেন করেন তাদের কাছ থেকে এ পরিষেবা নেয়া যাবে। এ পরিষেবা ব্যবহারকারীরা ‘অ্যাপল পে’র মাধ্যমে আইফোন ও আইপ্যাডে অনলাইন এবং ইন-অ্যাপ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৫০ ডলার থেকে শুরু করে ১ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮৫ শতাংশ খুচরা বিক্রেতা অ্যাপল পে থেকে বিল নিয়ে থাকেন।
ব্রিটিশ কোম্পানি এজে বেলের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের প্রধান ড্যানি হিউসন বলেন, ‘অ্যাপল পে লেটার পরিষেবা অবশ্যই খাতটির অন্য প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলবে। অন্য কোম্পানিগুলো অ্যাপলের এ ঘোষণা দেখেছে। অ্যাপল সর্বত্রই পরিচিত। এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজার হিস্যার একটি বড় অংশ কেড়ে নেবে।’
তথ্য বলছে, সম্প্রতি অ্যাফার্মের শেয়ার ৭ শতাংশ কমেছে। যেখানে পেপালের কমেছে এর চেয়ে ১ শতাংশ কম। অ্যাপলের পে লেটার পরিষেবা চালু করায় শিগগিরই এ চিত্র আরো পাল্টাতে পারে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
২০২০ সালে মহামারীজনিত লকডাউনের ফলে ক্রেতারা অনলাইন পেমেন্ট প্লাটফর্মগুলোয় ভিড় করেছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও তরুণ ক্রেতারা। বিএনপিএল পরিষেবা সরবরাহকারী ফিনটেক সংস্থাগুলোর চাহিদা এ সময় অত্যন্ত বেড়ে যায়।
পেপাল ও ব্লক ইনকসহ ডিজিটাল পেমেন্ট জায়ান্টরা অধিগ্রহণের মাধ্যমে সেক্টরটিতে নিজেদের অবস্থান প্রসারিত এবং ব্যবসায়িক অবস্থান সুসংহত করেছে। যেখানে শুধু অ্যাফার্মেরই কয়েকশ কোটি ডলার পাবলিক শেয়ার রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির শুরু থেকেই এ সেক্টরের ভাগ্য পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। সুদের হার বৃদ্ধি এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি ভোক্তা পর্যায়ে ক্রয়ক্ষমতা কমিয়েছে। ভোক্তাকে ব্যয় করার মানসিকতায় লাগাম টানতে বাধ্য করেছে।
আরেক মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডিএ ডেভিসনের বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ব্রেন্ডলার বলেন, ‘আমরা আশা করি অ্যাপল সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেবে। বিশেষ করে এ বিস্তৃত বাজারে। কেননা অংশীদার ছাড়াই সরাসরি নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে ঋণ দেয়া এবং সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে অ্যাপল জানিয়েছ, ঋণ প্রকল্পের জন্য মাস্টারকার্ড পরিষেবা যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গোল্ডম্যান স্যাক্স (জিএস) মাস্টারকার্ডগুলো ইস্যু করেছে।
অ্যাপল পের মূল সুবিধা এর নিরাপত্তা স্তর। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, লেনদেন, ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের তথ্য ডিভাইসে বা অ্যাপলের সার্ভারে সংগ্রহ করা হয় না। এজন্য নিরাপত্তার দিক থেকে বেশ সুবিধাজনক অ্যাপল পে। এর পরিবর্তে একটি আলাদা ডিভাইস অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারকারীর ডিভাইসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত থাকে। লেনদেনগুলো শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। আইফোন চুরি হলে ফাইন্ড মাই আইফোন ফিচার দিয়ে খুব সহজেই ডিভাইসটি খুঁজে বের করা সম্ভব।
অ্যাপল পে লেটারের বাজার বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্টোরে অ্যাপল পে দিয়ে কেনাকাটা তুলনামূলক সহজ। সাফারি কেনাকাটার জন্য কোনো অ্যাকাউন্ট তৈরি বা পিন কোডের প্রয়োজন হয় না। ফেস আইডি, টাচ আইডি বা ডিভাইসের পাসকোড দিয়ে খুব সহজেই পেমেন্ট করা সম্ভব।
বর্তমানে মোট ৬০টির অধিক দেশে অ্যাপল পে চালু আছে। ১০ হাজারেরও বেশি ব্যাংক ও নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে অ্যাপল পে।
কোন মন্তব্য নেই