নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যবসা বরকতহীন: ইসলামের আলোকে সফল বাণিজ্যের ৭ নির্দেশনা
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যবসা বরকতহীন: ইসলামের আলোকে সফল বাণিজ্যের ৭ নির্দেশনা
সংবাদ প্রতিবেদন:
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ | অনলাইন ডেস্ক, টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর কাছে শুধু লাভ-লোকসানের হিসাবই গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং এর চেয়েও বড় বিষয় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ। ইসলাম ব্যবসাকে শুধু লেনদেনের বিষয় হিসেবে দেখেনি, বরং এতে নৈতিকতা, সততা, ও আত্মিক বিশুদ্ধতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
“তোমরা সৎকাজ ও তাকওয়ার ব্যাপারে একে অন্যকে সহযোগিতা করো, আর পাপ ও জুলুমের কাজে সহযোগিতা করো না।”
(সুরা মায়িদা, আয়াত ২)
১. ব্যবসায় নিয়ত ও উদ্দেশ্য হতে হবে হালাল ও বিশুদ্ধ
যে ব্যবসায়ী হালাল উপায়ে উপার্জন করে নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে চায়, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দান করেন।
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন—
“ব্যবসা শুরু করার সময় বিশুদ্ধ নিয়ত করা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং সন্দেহজনক পথ এড়িয়ে চলা জরুরি।”
(ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮৪)
২. সততা ও বিশ্বস্ততা—ব্যবসার মূলভিত্তি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।”
(তিরমিজি, হাদিস ১২০৯)
৩. সত্য বলা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাকা
হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত—
“যদি বিক্রেতা ও ক্রেতা সত্য কথা বলে এবং সবকিছু স্পষ্ট করে জানায়, তাদের লেনদেনে বরকত হবে। কিন্তু যদি মিথ্যা বলে বা গোপন করে, বরকত উঠে যাবে।”
(বুখারি, হাদিস ২০৭৯)
৪. সুদ ও অন্যায় লেনদেন থেকে বিরত থাকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“আল্লাহ সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষী ও লেখক—সবার ওপর অভিশাপ দিয়েছেন।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৯৮)
৫. ওজন ও পরিমাপে প্রতারণা হারাম
আল্লাহ বলেন—
“ন্যায়সংগতভাবে ওজন করো এবং পাল্লায় কম দিয়ো না।”
(সুরা আর-রহমান, আয়াত ৯)
৬. নামাজ ও আল্লাহর স্মরণে অগ্রাধিকার দাও
আল্লাহ তাআলা বলেন—
“হে ঈমানদাররা! যখন জুমার নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো এবং আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও।”
(সুরা জুমআ, আয়াত ৯)
৭. দান-সদকা ব্যবসার বরকত বৃদ্ধি করে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“হে ব্যবসায়ীরা! শয়তান ও গুনাহ লেনদেনে অংশ নেয়, তাই তোমরা তোমাদের লেনদেনকে দান-খয়রাতের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করো।”
(তিরমিজি, হাদিস ১২০৮)
দান-সদকা কখনো ধন কমায় না; বরং সম্পদে বরকত আনে এবং আত্মাকে শুদ্ধ করে।
উপসংহার:
নীতি-নৈতিকতাহীন ব্যবসা সাময়িকভাবে লাভজনক মনে হলেও, এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি থাকে না এবং বরকত চলে যায়। তাই একজন প্রকৃত মুসলমান ব্যবসায়ীর লক্ষ্য হওয়া উচিত—সততা, ন্যায়নীতি ও তাকওয়ার মাধ্যমে হালাল উপার্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

কোন মন্তব্য নেই