পানের দাম পড়ে বিপাকে মানিকগঞ্জের চাষিরা, টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

পানের দাম পড়ে বিপাকে মানিকগঞ্জের চাষিরা, টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

পানের দাম পড়ে বিপাকে মানিকগঞ্জের চাষিরা, টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক || টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৯:২১

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পানচাষিদের মুখে এখন দুশ্চিন্তা। ভালো ফলন হলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। এক সময় এ অঞ্চলের পানের সুনাম ছিল দেশ-বিদেশে, কিন্তু রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই বাজার এখন ধসের মুখে।

হরিরামপুরের মানিকনগর, কৃত্তিপুর, গারুটিয়া ও ধুলিশ্বর গ্রামের মাঠজুড়ে একসময় অসংখ্য পানবরজ ছিল, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩০টির মতো। সার, কীটনাশক, বাঁশ, পাটখড়ি ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ, কিন্তু পানের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

চাষিদের অভিযোগ ও বাস্তবতা
মানিকনগর গ্রামের কৃষক লতিফ মিয়া বলেন,
“আগে এক বরজে যে খরচ হতো এখন তার তিনগুণ লাগে। শ্রমিকের মজুরি ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে দাম না থাকায় অনেক পান তোলা হয় না।”

আরেক চাষি মো. আকছেদ বলেন,
“৬৬ শতাংশ জমিতে পানচাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু পানের দাম এত কম যে খরচই উঠছে না। সরকার যদি প্রণোদনা বা ভর্তুকি দিত, আমরা টিকে থাকতে পারতাম।”

দীর্ঘদিন ধরে পানচাষে জড়িত আলম মিয়া বলেন,
“হরিরামপুর একসময় ‘পানের রাজ্য’ ছিল। আমাদের সাঁচি ও গয়াচি জাতের পানের সুনাম ছিল দেশজুড়ে। এখন ১০০ পাতা পান বিক্রি হয় মাত্র ৪০–৫০ টাকায়, আগে যা ১০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে পানচাষ হারিয়ে যাবে।”

কৃষি কর্মকর্তার মতামত
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন,
“বর্তমানে প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে ৩০টির মতো বরজ রয়েছে। সাঁচি পানের রপ্তানি বন্ধ থাকায় এখন গয়াচি জাতের পান বেশি চাষ হচ্ছে। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। আমরা কৃষকদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।”

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
মানিকগঞ্জ কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন,
“পানচাষিরা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি সহায়তা না পেলে মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘পানের রাজ্য’ হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে।”

হরিরামপুরের শত বছরের ঐতিহ্য এখন সংকটে। স্থানীয়রা বলছেন, ন্যায্যমূল্য ও রপ্তানি পুনরায় চালু করা গেলে এই চাষ আবার লাভজনক হয়ে উঠতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই