চোখে না দেখেও ব্যাটসম্যানরা যেভাবে খেলে অবিশ্বাস্য সব শট
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
চোখে না দেখেও ব্যাটসম্যানরা যেভাবে খেলে অবিশ্বাস্য সব শট
ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের কাজ শুধু বল মারা নয়—প্রতিটি ডেলিভারির আগে মুহূর্তের মধ্যেই নিতে হয় শত সিদ্ধান্ত। কোন বল খেলবেন, কোনটা ছেড়ে দেবেন, কেমন শট খেলবেন—সবই নির্ভর করে বলটি দেখে বোঝার ওপর।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত কম সময়ে, যেখানে ঘণ্টায় ১৫০ কিমি বেগে বল ছোড়া হয়, ব্যাটসম্যানরা সত্যিই কি চোখে দেখে খেলেন, নাকি অভ্যাস আর অনুমানই তাঁদের সবচেয়ে বড় ভরসা?
ভালো ব্যাটসম্যানরা ‘অন্ধকারেও দেখতে পান’
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক জ্যারড কিম্বার তাঁর বই “দ্য আর্ট অব ব্যাটিং”-এর ‘Eyes’ অধ্যায়ে লিখেছেন—দারুণ ব্যাটসম্যানরা বল দেখেন না, অনুভব করেন। তাঁদের মস্তিষ্ক এত প্রশিক্ষিত যে, বোলারের অ্যাকশন দেখেই বুঝে যান বলের লাইন–লেংথ।
এই দক্ষতার সেরা উদাহরণ পাকিস্তানের কিংবদন্তি সাঈদ আনোয়ার। একসময় বল ঠিকভাবে দেখতে না পেয়ে তিনি গিয়েছিলেন চোখের বিশেষজ্ঞের কাছে। কিন্তু সেটা চোখের সমস্যা নয়—ছিল মুরালিধরনের রহস্যময় বল বুঝে না ওঠার ফল।
মুরালিধরনের রহস্য, আনোয়ারের বিভ্রান্তি
মুরালিধরনের অনন্য অ্যাকশন ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করত। তাঁর কবজির অস্বাভাবিক ঘূর্ণন ও ‘ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড’ রিলিজ ব্যাটসম্যানকে ভুল পথে চালিত করত। আনোয়ারও বুঝতে পারতেন না বল কোথা থেকে বেরোচ্ছে।
ব্যাটসম্যানদের চোখের পেছনের বিজ্ঞান
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ড. শেরিল কালডার, যিনি আই জিম প্রতিষ্ঠাতা, বলেন—
“আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল এত দ্রুত আসে যে, চোখে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। ব্যাটসম্যানরা আসলে অনুমান করে খেলেন।”
তাঁর মতে, পেশাদার ব্যাটসম্যানরা বল ছাড়ার ২৫০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এটা একধরনের অবচেতন প্রতিক্রিয়া, যা বছরের পর বছর অনুশীলনে তৈরি হয়।
যখন চোখও প্রতারণা করে
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলেন—
“শরীরের সব পেশির মতো চোখও একটা পেশি। একে ট্রেনিং দিতে হয়।”
অর্থাৎ, ব্যাটসম্যানদের ‘চোখ’ আসলে শেখানো এক দক্ষতা। সঠিকভাবে তাকানো, বলের গতিপথ অনুমান করা, বোলারের শরীরী ভাষা পড়া—সব মিলিয়ে তৈরি হয় ‘ভালো চোখওয়ালা ব্যাটসম্যান’।
ডন ব্র্যাডম্যান থেকে রস টেলর: দেখা না দেখার গল্প
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরীক্ষায় ডন ব্র্যাডম্যানের দৃষ্টিশক্তি ছিল দুর্বল, তবু টেস্টে গড় ৯৯.৯৪। ভারতের টাইগার পতৌদি এক চোখ হারিয়েও ছয়টি সেঞ্চুরি করেছেন।
নিউজিল্যান্ডের রস টেলরও চোখের রোগ “পটেরেজিয়াম”-এর মধ্যেও রান করে গেছেন। রাতে আলোতে বল দেখা কঠিন ছিল, কিন্তু মস্তিষ্কের অনুমানই তাঁকে সাহায্য করেছে।
ব্যাটসম্যানদের অদৃশ্য সূত্র
বোলারের আঙুল, কবজি, রান আপ, ফিল্ডারদের অবস্থান—সবই ব্যাটসম্যানদের কাছে সূত্র। কিন্তু তাঁরা ভাবার আগেই শরীর সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ক্রিকেটে সেরা ব্যাটসম্যানরা আসলে অন্ধকারেও দেখতে পান—যখন তাঁদের চোখও দেখে না।
কোন মন্তব্য নেই