ঝালকাঠির একমাত্র নারী নাপিত শেফালী রানী শীল! - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ঝালকাঠির একমাত্র নারী নাপিত শেফালী রানী শীল!



ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দোগনা বাজারের একমাত্র নাপিত শেফালী রানী শীল। প্রায় দুই যুগ ধরে এলাকার লোকজনের চুল কাটছেন তিনি।

সাধারণত বাংলাদেশে পুরুষরা নাপিতের কাজ করলেও জীবিকার তাগিদে এই পেশায় আসতে হয় তাকে।


প্রত্যন্ত গ্রামে একজন নারীর জন্য এমন একটি পেশা বেছে নেওয়া কতটুকু কঠিন, কেনই বা এই পেশায় আসতে হয়েছে তা নিয়ে কথা বলেছেন ওই নারী।

এ বিষয়ে বিবিসি বাংলা একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বিবিসির শাহনেওয়াজ রকির সাথে কথা হয় তার। তিনি বলেন, আমার নাম শেফালী রানী শীল।
আমি চুল কাটি। চুল কাটছি আমি ২০ থেকে ২৫ বছর হয়েছে তার আগে স্বামী কাঠতো।

অসুস্থ হয়ে পঙ্গু হলে নিরুদ্দেশ হয়ে যান শেফালির স্বামী। তার জ্বর হয়েছিল এরপর সে প্যারালাইজড হয়ে যায়। ব্যাঙের মতো করে হাঁটেন। পরে চেয়ারম্যান তাকে একটি গাড়ি দেয়। গাড়ি নিয়ে সে কোথায় কোথায় যেন থাকে। এদেশে ও থাকে না সে। তখন আমি চুল কাটা শুরু করি কারণ আমার ছেলে মেয়ের খাওয়া লাগবে না?

তিনি বলেন, বাপে তো কোথায় গেছে কোন পাত্তা নেই। শুরুতে মানুষের বাড়িতে এক সের দুই সে চালের কাজ করেছি। তারপর আর কাজ করিনি কারণ বাচ্চারা কান্দে। তখন দোকানে বসে চুল কাটা শুরু করি। যেন যেখানে কাজ করি সেখানে এই বসে বাচ্চা কান্দুক।

স্বামীর কাছ থেকে চুল কাটা শেখেন শেফালী। শুরুতে শুধু ছোটদের চুল কাটতেন তিনি।

শেফালী বলেন, প্রথমে মানুষ হাসাহাসি করত যে মহিলা চুল কাটে। কেমন হবে ভালো হয় না খারাপ হয় এখন তো দেখে ভালোই হয়। এখন একদিন বাজারে না গেলে সবাই বলে কোথায় ছিলে। তবে দূরের গ্রামের মানুষ আসলে তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। বলে মহিলা চুল কাটে ভালোই তো কাটে।


ঝালকাঠির প্রত্যন্ত অঞ্চল দোগিনা বাজারে একমাত্র নাপিত শেফালী।

অনেকে বলত নারীকে দিয়ে চুল কাটাবো, এতে করে প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগছে। এখন তো অভ্যাস হয়ে গেছে তার পরিবার তো গরিব অবস্থায় আছে।

কৃষক তৈয়ব আলী হাওলদার, বাইরে যে টাকা দিবো, সে টাকাটা ওকে দিই আরকি। যখন চুল কাটা আর সেভ করি তখন ৫০ টাকা দেই। আর শুধু শেভ করলে দেই ২০ টাকা।



শেফালী রানী শীল বলেন, গ্রামের বাজারে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়৷ আবার দুই একদিন গ্রাহকই হয় না, তখন বাড়ি চলে আসি। আর রাতে কি করে জানেন, বিভিন্ন দোকানে জল টানি। দুই দোকানের জল টেনে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা বাজে।

সংসার আর দোকান এক হাতে সামলাতে হয় শেফালিকে।

বাসায় এসে রান্নাবান্না করা লাগে মেয়েরা স্কুলে যায় তাদের ভাত খাওয়ানো লাগে। রান্না করে রেখে আবার গরুর কাছে যাই।


সেটার দেখাশোনা করে বাড়ি এসে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে আবার বাজারে যাই। সকাল ৮-৯টায় দোকানে যাই, আর রাতে ফিরি ১০টায়।

তিনি বলেন, আমি নিজে একটা ভালো কাপড় পড়ি না। রোগে শোকে ডাক্তার দেখানো লাগে সেটাও পারি না। সেজো মেয়েটার মাথায় আজকাল ব্যথা করে বলে মাগো ডাক্তার দেখাবা না। তখন বলি মনু দেখ আমি যে কাম (কাজ) করি তোদের তো এসব দিতে পারি না।

চুল কাটার আয় দিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন শেফালী।

শেফালীর মেয়ে বড় ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। আরেকটি মেয়ে বিএ পড়ে। ছেলে পড়ে আইএ (এএইচএসসি), ১০ম শ্রেণিতে পড়ে একজন ও আরেকজন ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। বলছি তোরা পড়তে থাক একটা কিছু তো হবি। এই করছি আর কিছু করতে পারিনি।

অন্যের জায়গায় ঘর উঠিয়ে বসবাস করছেন শেফালী শীল। স্বপ্ন একদিন তার নিজের জায়গায় একটি ঘর হবে। এমন স্বপ্ন দেখেন শেফালী রানী শীল। একদিন তার স্বপ্ন পূরণ হোক, শেফালীর জন্য শুভকামনা।

কোন মন্তব্য নেই