শর্ত ও সচেতনতার অভাবে অ্যান্টিজেন টেস্টে শনাক্ত কম
দ্রম্নততম সময়ে করোনা উপসর্গযুক্ত মানুষের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে দেশের ১০ জেলায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষা বার্ যাপিড টেস্ট কার্যক্রম শুরু হয়। শুক্রবার থেকে এই তালিকায় আরও ১৯টি চালু হওয়ায় মোট অ্যান্টিজেন টেস্ট ল্যাব সংখ্যা ২৯টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও সরকারের স্বাস্থসেবা বিভাগের ধারণা ছিল এই পদ্ধতি করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রকোপ মোকাবিলায় কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ সহজ হবে। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্টে যে হারে রোগী শনাক্ত হওয়ার ধারণা করা হয়েছিল সেভাবে হচ্ছে না। মূলত প্রচারণার অভাব ও উপসর্গজনিত শর্তের কারণে মানুষ অ্যান্টিজেন টেস্ট করাতে পারছে না। তাই রোগীও শনাক্ত তুলনামূলক কম হচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হওয়া ১০টি জেলা হচ্ছে পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, পটুয়াখালী, মেহেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মাদারীপুর ও সিলেট। এরমধ্যে সিলেট ছাড়া বাকি জেলাগুলোর সদর হাসপাতালে এই টেস্ট করা যাবে। সিলেটে অ্যান্টিজেন টেস্ট হবে শহীদ শামসুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর সঙ্গে গতকাল শুক্রবার থেকে নতুন করে ঢাকা বিভাগে ছয়টি, চট্টগ্রামে দুইটি, ময়মনসিংহে একটি, রাজশাহীতে চারটি, রংপুরে ছয়টি, সিলেটে চারটি, খুলনায় তিন ও বরিশাল বিভাগে তিনটি করে নতুন ল্যাব যুক্ত করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্টে শনাক্ত কম হওয়ার ব্যাপারে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ৫ ডিসেম্বর থেকে যশোরে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ১২ দিনে এখানে মাত্র ৭৪ জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে। যার মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন আটজন। একদিনে সর্বোচ্চ ১৪ জনের পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষা কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্ট করার জন্য কিছু শর্ত থাকায় টেস্ট যে হারে হওয়ার কথা ছিল সে হারে হচ্ছে না। শর্তগুলো হলো পরীক্ষার করাতে আসা ব্যক্তিদের পাঁচ থেকে সাত দিনের জ্বর, সর্দি-কাশি-গলাব্যথার মতো লক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। সর্দি-কাশি গলাব্যথা অনেকের থাকলেও পাঁচ থেকে সাত দিনের জ্বর অনেকের নেই। যে কারণে চিকিৎসকরাও এ পরীক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন না। এজন্য উপজেলাগুলোয় প্রচার চালানো হয়েছে, সভা হয়েছে। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব করেছি। তবে বড় আকারে যে প্রচারণা দরকার তা হয়নি। তেমন একটা টেস্ট হচ্ছে না মন্তব্য করে পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১২ দিনে এ জেলায় মাত্র ৪৭ জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন মাত্র একজন। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ১২ দিনে টেস্ট হয়েছে ৭১টি। শনাক্ত হয়েছেন মাত্র ৯ জন। অ্যান্টিজেন টেস্ট সেভাবে না হওয়ার প্রধান তিনটি কারণ উলেস্নখ করে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো একরাম উলস্নাহ বলেন, প্রথমত মানুষ টেস্ট করতে আসছে না, কারণ অনেকেই ঘরে বসে ওষুধ খাচ্ছে। আবারর্ যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রচারণাও হয়নি। অনেকেই এ বিষয়ে জানে না। এই টেস্টের জন্য যেসব উপসর্গ থাকতে হয় দেখা যাচ্ছে সেটাও অনেকের নেই। যেমন পাঁচ থেকে সাত দিনের জ্বর থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন শাখার প্রধান ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, আরটি-পিসিআরে সবার টেস্ট করা হয়। যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের তো করা হয়, আবার যাদের লক্ষণ নেই কিন্তু রোগীর সংস্পর্শে ছিলেন বা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাদের টেস্ট হয়। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্ট কেবল উপসর্গ থাকলেই করা যাবে। যাদের লক্ষণ-উপসর্গ নেই তাদের এ পরীক্ষায় পজিটিভ আসবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ জন্য গণহারে অ্যান্টিজেন টেস্ট হবে না। প্রসঙ্গত মার্চে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর শনাক্তের একমাত্র উপায় ছিল আরটি-পিসিআর (রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারেজ রিঅ্যাকশন) টেস্ট। অথচ পরীক্ষা বাড়ানো, দ্রম্নত শনাক্তসহ, আরটিপিসিআর টেস্ট ও আলাদা ল্যাবরেটরির সীমাবদ্ধতার কারণের্ যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজনীয়তার কথা শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও তাদের সভায় পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি টেস্ট কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেয়। গতকাল এর সঙ্গে আরও ১৯টি ল্যাব নতুন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই