বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা


স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন। জড়ো হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। তুলে ধরছেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া নানা উদ্যোগ। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে এরই মধ্যে সরকার ও বিনিয়োগকারীরা কয়েক ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি ডলার) ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আর্থিক বিশ্বের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।


তবে কিছু পরিবেশকর্মী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু সুরক্ষায় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।


এপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বকে বিপর্যয়কর উষ্ণায়ন এড়াতে হলে বেসরকারি খাতকে অবশ্যই জড়িত থাকতে হবে—এমন একটি ক্রমবর্ধমান ঐকমত্য রয়েছে। কপ২৬ সম্মেলনে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী রিশি সুনাক বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিপুল পরিমাণ তহবিল প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শুধু পাবলিক বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়।


এ সময় তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সঙ্গে বিনিয়োগগুলো সামঞ্জস্য করায় ৪৫০টিরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একটি জোটের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। ১৩০ লাখ কোটি ডলারের সম্পদ পরিচালনা করা এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্প বিপ্লবের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। চলতি বছর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক প্রধান মার্ক কারনি ‘দ্য গ্লাসগো ফাইন্যান্সিয়াল অ্যালায়েন্স ফর নিট জিরো’ নামে এ জোট গঠন করেছেন। জোটটি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে বৈজ্ঞানিক নির্দেশিকা অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দশকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার প্রতিশ্রুত মাত্রায় আনতে বিনিয়োগকারীদের জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রকল্পের অর্থ নাটকীয়ভাবে ফেরত নিতে হবে। সুনাক বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যের জলবায়ু পরিকল্পনার আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে।


তবে যুক্তরাজ্যের এ প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশ আইন-সংক্রান্ত দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্লায়েন্টআর্থের প্রতিষ্ঠাতা জেমস থরনটন। এজন্য তিনি এসব প্রতিশ্রুতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের বাজার এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা নোংরা কার্যক্রম আড়াল করতে সবুজ উদ্যোগের বিশাল ঘোষণাগুলোকে ব্যবহার করছে।


বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, নিট শূন্য গণনা করার অনেক উপায় রয়েছে এবং এটিকে একটি আদর্শ সংজ্ঞায়ন করা আগামীর বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এজন্য অনেক বিশেষজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্য নিয়ে অবিশ্বাসী ছিলেন।


বেসরকারি গ্রুপ গ্লোবাল জাস্টিস নাউয়ের নীতিবিষয়ক প্রধান দরোথি গেরেরো বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বর্তমানের জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকটের জন্য দায়ী। এজন্য জলবায়ু সুরক্ষার নায়ক হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমাদের গভীরভাবে সন্দেহজনক হওয়া উচিত। সরকারকে অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং করপোরেশনের হাতে তুলে না দিয়ে এ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে হবে।


তাছাড়া পরিবেশের দিকে নজর রেখে বিনিয়োগ করার বছরের পর বছর ধরে আর্থিক খাতকে পুনর্নির্মাণের সবচেয়ে বড় প্রবণতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গ্লোবাল সাসটেইনেবল ইনভেস্টমেন্ট অ্যালায়েন্সের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের শুরুতে টেকসই তহবিলে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল। পেশাদার ব্যবস্থাপনার অধীনে বিনিয়োগ করা প্রতি ১০০ ডলারের মধ্যে ৩৬ ডলার গেছে জলবায়ুবান্ধব প্রকল্পে। চার বছর আগেও এ অনুপাত ২৮ ডলার ছিল।


তবে বছরের মাঝামাঝিতে লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনফ্লুয়েন্সম্যাপ ১৩০টি জলবায়ু-থিমযুক্ত তহবিল বিশ্লেষণ করে। সেখানে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি বিনিয়োগ জলবায়ুবান্ধব ছিল না। এর মধ্যে কিছু বিনিয়োগকে জীবাশ্ম জ্বালানি সীমাবদ্ধ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল।


লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের জলবায়ু পরিবর্তন নীতির বিশেষজ্ঞ এলিনা এভারচেনকোভা বলেন, বিনিয়োগকারী ও সরকারগুলোর ঘোষণা সঠিক দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এক্ষেত্রে স্বাধীন নজরদারি প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই