বৈশ্বিক বিক্রি কমলেও অ্যাপলের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত
কভিড-১৯ মহামারী ও পরবর্তী সময়ে বিশ্বে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের চাহিদা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে বর্তমানে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। এর প্রভাব স্মার্টফোনের বাজারেও দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে স্মার্টফোন খাতে তেমন প্রবৃদ্ধি চোখে পড়েনি। তবে সামগ্রিকভাবে বিক্রি কমলেও কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল তাদের শীর্ষাবস্থান ধরে রেখেছে এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। খবর গিজচায়না।
মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বিভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক কারণে স্মার্টফোন কেনার চাহিদা দিন দিন কমছে। বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যানালিস জানায়, আগামী ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত এ সংকটাবস্থা চলমান থাকবে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, নিত্যপণ্য ও প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমানে ক্রেতারা স্মার্টফোন কেনার প্রয়োজনীয়তা ও ইচ্ছা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে।
সামগ্রিকভাবে বিশ্বে স্মার্টফোন বিক্রি কমলেও সবাই যে এতে প্রভাবিত হয়নি তার জন্য বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। আগের বছরের তুলনায় চলতি বছর ২২ শতাংশ বাজার হিস্যা নিয়ে শীর্ষ পাঁচ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটি ফ্ল্যাগশিপ ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে লো থেকে মিড রেঞ্জের বাজারে প্রতিষ্ঠানটি ভালো অবস্থানে রয়েছে।
২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার টানা তিনবার নিম্নমুখী বিক্রির রেকর্ড ধরে রেখেছে। বছরওয়ারি হিসাবে তা ৯ শতাংশ কম এবং ২০১৪ সালের পর যেকোনো বছরের সবচেয়ে খারাপ তৃতীয় প্রান্তিক। বিশ্ব অর্থনীতির দুরবস্থা গ্রাহকদের ইলেকট্রনিক হার্ডওয়্যারের পরিবর্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনায় মনোনিবেশ করতে বাধ্য করেছে।
চ্যানেল ইনভেন্টরি কমাতে প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে ২২ শতাংশ বাজার নিজেদের দখলে রেখেছে স্যামসাং। শীর্ষ পাঁচটি স্মার্টফোন উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শুধু অ্যাপলই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যখন মন্দা চলছিল তখন ১৮ শতাংশ বেশি বাজার হিস্যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। এজন্য আইফোনের চাহিদাকেই মূল কারণ হিসেবে গণ্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে শাওমি, অপো ও ভিভো চীনের বাইরে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছে।
শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অ্যাপল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও প্রযুক্তি জায়ান্টটির বাজার হিস্যা ১৫ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি তাদের আইফোন ১৪ সিরিজ, বিশেষ করে প্রো মডেলগুলোর বিষয়ে আশাবাদী। এছাড়া অ্যাপল অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় যেকোনো সমস্যা ভালোভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম।
বৈশ্বিক বিক্রি কমলেও এশিয়ার দেশ ভারতে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে, গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় যা ৬ শতাংশ কম। ৯২ লাখ স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে ভারতের বাজারে শীর্ষস্থান শাওমির। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্যামসাংয়ের বিক্রি হয়েছে ৮১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ভিভো ও অপোর বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৭৩ লাখ ৭১ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন। ৬২ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে পঞ্চম স্থান আরেক চীনা ব্র্যান্ড রিয়েলমির।
ক্যানালিসের বিশ্লেষক সানিয়াম চৌরাসিয়া বলেন, সুখবর হচ্ছে উৎসব মৌসুম শুরু হওয়ায় গত প্রান্তিকের কয়েক সপ্তাহে চাহিদা চাঙ্গা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় এন্ট্রি-লেভেলের ডিভাইসের বাজার সংকুচিত হয়েছে। তবে মাঝারি থেকে উচ্চমূল্যের সেগমেন্টে বিক্রি বেশ চাঙ্গা ছিল। এতে অপোর ওয়ানপ্লাস ও ভিভোর আইকিউওওর মতো ব্র্যান্ড ভূমিকা রেখেছে।
ফাইভজি হ্যান্ডসেটও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে জানান চৌরাসিয়া। তিনি বলেন, এন্ট্রি-লেভেলের ব্র্যান্ডগুলোও ফাইভজি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে টেক্কা দিতে সবচেয়ে সাশ্রয়ী ফাইভজি স্মার্টফোন আনতে কাজ করছে গুগল ও জিও।
ভারত, চীনসহ প্রধান বাজারগুলোয় জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে স্মার্টফোন বিক্রি কমেছে। ক্যানালিসের বিশ্লেষক সানিয়াম চৌরাসিয়া বলেন, চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিক ও ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে স্মার্টফোন বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন ডিসকাউন্ট ও বান্ডেল প্রমোশনের আশায় হয়তো অনেক গ্রাহকই নতুন স্মার্টফোন ক্রয় পেছাচ্ছে। গত বছরের এ উৎসব মৌসুমে যে রকম স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।

কোন মন্তব্য নেই