টুইটারপ্রধানের পদ ছাড়ছেন মাস্ক? - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

টুইটারপ্রধানের পদ ছাড়ছেন মাস্ক?


 


মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্ম টুইটার অধিগ্রহণের পর থেকে একের পর একে বিতর্কে জড়াচ্ছেন ইলোন মাস্ক। কর্মী ছাঁটাই, অফিসে যোগদানের নিয়মসহ সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট বাতিলের কারণে কঠোর সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন অন্যতম এ ধনী। সম্প্রতি প্লাটফর্মটির প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে ব্যবহারকারীদের মত চেয়েছেন টেসলা প্রধান। খবর রয়টার্স।


টুইটারে চালু হওয়া ভোটিংয়ে ১ কোটি ৭৫ লাখ ২ হাজার ৩৯১ ভোট পড়েছে। যার মধ্যে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ পদ থেকে সরে যাওয়ার পক্ষে এবং পদে আসীন থাকার পক্ষে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটে যে ফল আসবে ইলোন মাস্ক তা মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছেন। তাই শিগগিরই হয়তো টুইটারের প্রধান নির্বাহী পদে রদবদল হতে পারে। জরিপে টুইটারপ্রধানের পদ ছাড়ার বিষয়টি বেশি প্রতিফলিত হলে কী করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি টুইটারের মালিক।


কে হবেন টুইটারের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী, এক অনুসারীর এমন প্রশ্নের জবাবে মাস্ক জানান, এখন পর্যন্ত নতুন কোনো উত্তরসূরি নির্বাচিত হয়নি। এর আগে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারের আদালতে মাস্ক জানিয়েছিলেন, তিনি ধীরে ধীরে টুইটারে সময় দেয়া কমিয়ে দেবেন। একপর্যায়ে কোম্পানির নেতৃত্বে নতুন কাউকে খুঁজবেন বলেও জানান। রয়টার্স প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। এরপর চিফ টুইট হিসেবে নিজের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ধারণের জন্য জরিপটি চালু করেন মাস্ক। প্লাটফর্মে মাস্টোডনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী সামাজিক মাধ্যমের প্রচারণা চালায় এমন অ্যাকাউন্ট ও প্লাটফর্মের লিংক ও ইউজার নেমযুক্ত কনটেন্ট শেয়ার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।


টুইটারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে থাকবেন কিনা, সে-সংক্রান্ত জরিপ চালুর আগে দেয়া এক টুইটে মাস্ক নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য ব্যবহারকারীদের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, আগামীতে নীতিমালায় বড় পরিবর্তনের আগে ভোট নেয়া হবে। আমি ক্ষমা চাইছি, আর এমন হবে না। এর কয়েক ঘণ্টা পর কোম্পানির মূল অ্যাকাউন্ট থেকে আরেকটি জরিপ চালু করে ভিন্ন প্লাটফর্মের প্রচারণা এবং কনটেন্ট-বিষয়ক নীতিমালা প্রসঙ্গে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মতামত জানতে চেয়েছে টুইটার।


নীতিমালা পরিবর্তন কার্যকর হলে এর ভুক্তভোগী হবে মেটার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম, মাস্টোডন, ট্রুথ সোশ্যাল, ট্রাইবালস, নোস্টর ও পোস্টের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।


টুইটারের মূল অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টের পাল্টা উত্তরে কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন?’ নীতিমালা পরিবর্তন প্রসঙ্গে আরেক টুইটার ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এর কোনো মানে হয় না।


অন্যদিকে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ-সংক্রান্ত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশের অভিযোগে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল টুইটার। অ্যাকাউন্ট বাতিলের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ও সাংবাদিকদের সংগঠন কঠোর সমালোচনা শুরু করে। সমালোচনার চাপে পুনরায় সেসব অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।


সে সময় মাইক্রোব্লগিং প্লাটফর্মটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে বলেও অনেকে মত দিয়েছেন। অ্যাকাউন্টগুলো বাতিলের পর মাস্ক টুইটারে ভোট চালু করেন। সেখানে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্টগুলো ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানায়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে টুইটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করেছিলেন। ফ্রান্সের শিল্পমন্ত্রী রোলান্ড লেসকিউর ১৬ ডিসেম্বর এক টুইটবার্তায় তার অ্যাকাউন্টে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের কথা জানান। ইউনাইটেড নেশনসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মেলিসা ফ্লেমিং সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্ট বাতিলের বিষয়ে খুবই বিরক্ত বলে জানান। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছেলের হাতে মোয়া নয়।


জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা খর্ব হয় টুইটারের এমন যেকোনো পদক্ষেপ অত্যন্ত বিব্রতকর। ইলোনজেট নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টে প্রভাব পড়ে। ১৪ ডিসেম্বর যেসব অ্যাকাউন্ট মাস্কের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজকে অনুসরণ করেছে সেগুলো বন্ধ করে দেয় টুইটার।


অধিগ্রহণের পর বেশকিছু পরিবর্তনের মধ্যে আগামী বছর নিউজলেটার পরিষেবা রেভু বন্ধ করার কথাও জানিয়েছে টুইটার। প্রতিযোগী অনলাইন পাবলিশিং প্লাটফর্ম সাবস্ট্যাক কেনার ঘোষণা দেয়ার পরই রেভু বন্ধের বিষয়টি প্রকাশ্যে এল। ২০২১ সালে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে নিউজলেটারের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। সে সময় রেভু অধিগ্রহণ করেছিল টুইটার। এছাড়া বিভিন্ন কারণে যাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গিয়েছিল তাদের অ্যাকাউন্টও ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন মাস্ক।


সে সময় পক্ষে বেশি ভোট পাওয়ায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টও ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানায় টুইটার। এক টুইটে মাস্ক লিখেছিলেন, মানুষ তাদের মতামত জানিয়েছে। ট্রাম্প আবার টুইটারে ফিরবেন।


ট্রাম্পকে কি টুইটারে ফিরিয়ে আনা উচিত এ প্রশ্ন তুলে একদিন আগে ভোটাভুটি চালু করেছিলেন মাস্ক। সেখানে হ্যাঁ ও না দুটি অপশন ছিল। ফলাফলে দেখা যায়, ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ সাবেক প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার ওই ভোটাভুটিতে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে দেড় কোটিরও বেশি টুইটার ব্যবহারকারী ভোট দেন। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট এ প্লাটফর্মে আর না ফিরতেও পারেন।

কোন মন্তব্য নেই