মুনাফা কমলেও চিপে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে স্যামসাং
কোম্পানির মুনাফা হ্রাস কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী টিএসএমসির বিনিয়োগ কমানোর সিদ্ধান্তের পরও চিপ খাতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে স্যামসাং। এক দশকের সর্বনিম্ন মুনাফায় সেমিকন্ডাক্টর খাতে বড় অংকের বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরতে পারে স্যামসাং এমন আশঙ্কার মধ্যে নতুন ইঙ্গিত দিল প্রযুক্তি জায়ান্টটি। খবর নিক্কেই এশিয়া।
বৈশ্বিক অর্থনীতির শ্লথগতিতে ইলেকট্রনিকস পণ্যের চাহিদা হ্রাস ও চিপের বাজারে মন্দায় ভুগছে স্যামসাং। ৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম কোম্পানিটি জানায়, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে তাদের পরিচালন মুনাফা ৬৯ শতাংশ কমেছে, যা ২০০৮ সালের একই প্রান্তিকের পর সর্বনিম্ন।
দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যামসাংয়ের মেমোরি চিপ, স্মার্টফোন ও ডিসপ্লের চাহিদা কম ছিল। ক্রমবর্ধমান সুদহার ও মূল্যস্ফীতির প্রভাবে ছুটির মৌসুমের কেনাকাটাও কমিয়েছে ভোক্তারা। চীনে অ্যাপলের আইফোন অ্যাসেম্বলি কমপ্লেক্সে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ স্যামসাংয়ের ডিসপ্লে ও মেমোরি চিপের সবচেয়ে বড় গ্রাহক অ্যাপল।
পিটার লি নামে সিটিগ্রুপের বিশ্লেষক বলেন, ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপের দাম স্যামসাংয়ের উৎপাদন খরচের সমপরিমাণে দাঁড়িয়েছে।
আয়-ব্যয়ের প্রাথমিক উপাত্তে স্যামসাং জানায়, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ওন, যা ২০২১ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৬৯ শতাংশ কম। বিশ্লেষকরা ৬ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ওন পরিচালন মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কনগ্লোমারেটটির বিক্রি ছিল ৭০ ট্রিলিয়ন ওন। ৩১ জানুয়ারি আয়-ব্যয়ের খাতওয়ারি সম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে স্যামসাং।
চতুর্থ প্রান্তিকের প্রাথমিক উপাত্তে শঙ্কা বেড়েছে স্যামসাংয়ের। কিছু কিছু খাতে উৎপাদন কমানোর পাশাপাশি মূলধন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। সিএলএসএ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক সঞ্জীব রানা বলেন, যদিও শুরুতে স্যামসাং বলে আসছিল, তারা মূলধন ব্যয় কমাবে না। তবে পরিস্থিতি এমন তাদের হয়তো অচিন্তনীয় কাজটিই করতে হবে। সেটি হলো মেমোরি চিপ উৎপাদন কমিয়ে দেয়া।
করোনা মহামারীর মধ্যে চিপের চাহিদা বৃদ্ধিতে রেকর্ড উৎপাদনে যায় স্যামসাংয়ের মতো চিপ নির্মাতা কোম্পানিগুলো। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সরবরাহ চেইন সংকট ফের প্রকট আকার ধারণ করে। উপকরণ ও যন্ত্রাংশ ব্যয় বৃদ্ধিতে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয় তারা। মাইক্রন টেকনোলজিসের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী চিপ নির্মাতা কোম্পানির দাবি, ২০২৩-এর দ্বিতীয়ার্ধের আগে সেমিকন্ডাক্টর খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। এ কারণে নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও কারখানা বাজেট কমিয়েছে তারা। মাইক্রন সতর্ক করে বলছে, চলতি বছর মুনাফায় ফেরা কঠিন হবে তাদের জন্য। ১০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি মূলধন ব্যয় কমিয়েছে তারা। এসকে হাইনিক্স বলছে, ২০২৩ সালে মূলধন ব্যয় অর্ধেক কমাবে। বিনিয়োগ কমানোর কথা জানিয়েছে শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা কোম্পানি টিএসএমসি।
কিন্তু স্যামসাংয়ের বেলায় মনে হচ্ছে, তারা বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। একাধিক সরবরাহকারী বলছে, অত্যাধুনিক চিপ তৈরির যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ক্রয় বহাল রেখেছে স্যামসাং।
বিরূপ সময়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া স্যামসাংয়ের জন্য নতুন কিছু নয়। কঠিন সময়ে এর আগেও বিনিয়োগ বাড়িয়েছে দক্ষিণ কোরীয় জায়ান্টটি। সংকট-পরবর্তী বুমের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এমন বিনিয়োগ করে তারা। অত্যাধুনিক ও অগ্রসর চিপ উৎপাদনে টিএসএমসিকে টেক্কা দিতে যায় স্যামসাং। বিরূপ এ পরিস্থিতিকে নিজেদের সুবিধায় নিতে চাচ্ছে তারা।
চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা স্যামসাংয়ের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেমিকন্ডাক্টর ও ব্যাটারির মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগে কর রেয়াত ঘোষণা করেছে সরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পিয়ংটেকে চিপ নির্মাণ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে স্যামসাং। কমপ্লেক্সটিতে ছয়টি বৃহৎ চিপ নির্মাণ কারখানা কার্যক্রম চালাবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম চিপ নির্মাণ হাব হবে পিয়ংটেক।
স্যামসাংয়ের পক্ষে বড় অংকের বিনিয়োগ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে এর বড় অংকের আপৎকালীন তহবিলের কারণে। গত সেপ্টেম্বর শেষে স্যামসাংয়ের আপৎকালীন তহবিলে নগদ ছিল প্রায় ১২৯ ট্রিলিয়ন ওন বা ১০ হাজার ১০০ কোটি ডলার, এসকে হাইনিক্স ও মাইক্রনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে যা প্রায় ১০ গুণেরও বেশি।

কোন মন্তব্য নেই