আজ স্বাক্ষরিত হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’
![]() |
| ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত |
আজ স্বাক্ষরিত হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’
নিজস্ব প্রতিবেদক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪ | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, দুপুর ২:৫২
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে আজ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’।
এই সনদে স্বাক্ষর করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি।
পটভূমি: জুলাই আন্দোলন থেকে সনদ প্রণয়ন
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ওই আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষ শহীদ এবং ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ আহত হন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট ২০২৪-এ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকারের তিনটি মূল লক্ষ্য ছিল—
1️⃣ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার,
2️⃣ জুলাই গণহত্যার বিচার, এবং
3️⃣ নির্বাচন আয়োজন।
এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই আন্দোলনের চেতনা ও সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’।
সংস্কারের রূপরেখা: রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দিশা
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৬টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে—
-
সংবিধান সংস্কার কমিশন
-
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন
-
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
-
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
-
পুলিশ সংস্কার কমিশন
-
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন
এই কমিশনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করে এবং ৩১ জানুয়ারি ২০২৫-এ প্রতিবেদন জমা দেয়।
এরপর ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ইউনূস এবং সহ-সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। কমিশনটি প্রায় আট মাস ধরে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সনদের চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে।
সনদের মূল বিষয়সমূহ
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থায় কাঠামোগত ও আইনি সংস্কারের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সনদে রয়েছে—
-
গণতান্ত্রিক ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের অঙ্গীকার,
-
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা,
-
এবং দায়বদ্ধ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা গঠনের প্রতিশ্রুতি।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
বহু রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে প্রণীত এই সনদকে বিশ্লেষকরা বলছেন—
“স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের সবচেয়ে বিস্তৃত জাতীয় ঘোষণা।”
এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার নতুন ভিত্তি রচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই