ঠাকুরগাঁওয়ের রহস্যময় সোনাচালুনী পুকুর: যেখানে একসময় ভেসে উঠতো সোনার চালুনী
ঠাকুরগাঁওয়ের রহস্যময় সোনাচালুনী পুকুর: যেখানে একসময় ভেসে উঠতো সোনার চালুনী
ঠাকুরগাঁও:
রহস্য আর লোককথায় ঘেরা এক আশ্চর্য পুকুর— যার নাম ‘সোনাচালুনী পুকুর’। জনশ্রুতি আছে, একসময় আহ্বান জানালেই এই পুকুরের পানিতে ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। সেই চালুনীতে থাকতো বিয়ের আসবাবপত্র, বাসনপত্র থেকে শুরু করে সোনার অলংকার পর্যন্ত!
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ গ্রাম বিষ্ণপুরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক পুকুরটি। প্রথমে মাছ চাষের জন্য খনন করা হলেও, পরবর্তীতে এটি পরিণত হয় এক অলৌকিক কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিয়ে বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় পুকুরে আহ্বান জানালে পানির উপর ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। অনুষ্ঠান শেষে সব জিনিস আবার পানিতে ভাসিয়ে দিলে সেগুলো অদৃশ্য হয়ে যেত।
গ্রামবাসীর মতে, ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন জমিদার দিননাথ মোহন পুকুরটি খনন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই পুকুরকে ঘিরে অলৌকিক গল্পটি ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
বয়সে প্রবীণ স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী ডাবলু চন্দ্র বর্মন জানান, “আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজের চোখে সোনার চালুনী ভেসে উঠতে দেখেছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এক ব্যক্তি একবার অনুষ্ঠান শেষে সোনার জিনিসপত্র ফেরত না দেওয়ায় এরপর থেকে আর কখনো সেই চালুনী ভেসে ওঠেনি।”
পরে ১৯৭০ সালের দিকে পুকুরটি ক্রয় করেন নফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে ওয়াজেদ চৌধুরী। শিক্ষার আলো ছড়াতে তারা পুকুরের পাশের জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। সেই থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শেফালী রাণী শর্মা বলেন,
“আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এই পুকুরে একসময় সোনার চালুনী ভেসে উঠতো। এখন এটি কল্পকথা হয়ে গেলেও, শত বছর আগের এই ঘটনার গল্প আজও মানুষের মনে বেঁচে আছে।”
সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে অলৌকিক সেই দৃশ্য, কিন্তু সোনাচালুনী পুকুরের রহস্যময় কাহিনী এখনো বেঁচে আছে মানুষের বিশ্বাসে, গল্পে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের ইতিহাসে।

কোন মন্তব্য নেই