বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী সাফল্য: ল্যাবে তৈরি হচ্ছে মানুষের জীবন্ত দাঁত

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী সাফল্য: ল্যাবে তৈরি হচ্ছে মানুষের জীবন্ত দাঁত

অনলাইন ডেস্ক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪

দাঁত হারালে আর ইমপ্লান্ট বা জটিল অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নাও পড়তে পারে—কারণ বিজ্ঞানীরা এখন ল্যাবরেটরিতে জীবন্ত দাঁত তৈরি করার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন।

লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক অ্যানা অ্যাঞ্জেলোভা ভলপনি প্রায় দুই দশক ধরে দাঁত পুনর্গঠনের ওপর কাজ করছেন। ২০১৩ সালে তার নেতৃত্বে একটি দল প্রথমবার মানুষের ও ইঁদুরের কোষ মিশিয়ে ল্যাবে একটি দাঁত তৈরি করতে সক্ষম হয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় তারা দাঁতের স্বাভাবিক বৃদ্ধির মতো পরিবেশ তৈরিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এবার তারা ব্যবহার করেছেন হাইড্রোজেল, যা মুখের ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে অনেকটা মিল রাখে।

গবেষক জুয়েচেন ঝ্যাং জানান, ইঁদুরের ভ্রূণ থেকে দাঁত তৈরির কোষ সংগ্রহ করে হাইড্রোজেলে প্রতিস্থাপন করা হয়। মাত্র আট দিনের মধ্যেই দাঁতের মতো কাঠামো তৈরি হতে দেখা যায়। পূর্ববর্তী পরীক্ষায় এসব ‘টুথ প্রাইমোর্ডিয়া’ ইঁদুরের শরীরে প্রতিস্থাপন করলে তা দাঁতের মূল ও এনামেলসহ পূর্ণ দাঁতে পরিণত হয়।

তবে মানবদেহে এটি প্রয়োগের আগে আরও কিছু ধাপ বাকি। প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো—ইঁদুরের কোষের পরিবর্তে সম্পূর্ণ মানব কোষ ব্যবহার করা।

ভলপনি জানান, ভবিষ্যতে দুটি উপায়ে দাঁত পুনর্গঠন সম্ভব হতে পারে—
১️⃣ ল্যাবে তৈরি দাঁতের অঙ্কুর মুখের ফাঁকা সকেটে বসিয়ে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া, অথবা
২️⃣ সম্পূর্ণ ল্যাব-উৎপাদিত দাঁত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মুখে প্রতিস্থাপন করা।

বিজ্ঞানীদের মতে, রোগীর নিজের কোষ থেকে তৈরি দাঁত দেহ সহজেই গ্রহণ করবে, ফলে অ্যালার্জি বা প্রদাহের ঝুঁকি থাকবে না। এমন দাঁত প্রকৃত দাঁতের মতোই অনুভূত হবে—যা প্রচলিত ইমপ্লান্টে সম্ভব নয়।

ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক ভিক্টর নেভেস বলেন, “ভলপনির গবেষণা দাঁত পুনর্জন্ম প্রযুক্তিকে শিল্প পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

এদিকে জাপানের ওসাকার কাতসু তাকাহাশি অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে দাঁত পুনরুজ্জীবনের গবেষণা করছেন, যা বর্তমানে মানব পরীক্ষা পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির পামেলা ইয়েলিক মানব ও শূকরের কোষ মিশিয়ে দাঁতের মতো গঠন তৈরি করেছেন।

এছাড়া ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মানুষের দাঁত থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল ব্যবহার করে দাঁতের অভ্যন্তরীণ অংশ পুনর্গঠনের গবেষণাও চালাচ্ছেন।

গবেষকদের ধারণা, এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যেই মানুষের প্রাকৃতিক দাঁত পুনর্জন্মের প্রযুক্তি বাস্তবে রূপ নিতে পারে।