ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণ করতে না পারা একটি যৌথ ব্যর্থতা - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণ করতে না পারা একটি যৌথ ব্যর্থতা


বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনসংখ্যার বিচারে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা খুবই কম। এর কারণ কী?


এ কথার সঙ্গে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনসংখ্যার বিচারে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা খুবই কম। এটি কতটা কম তা কিছু পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার হলো ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, নমিনাল হিসাবে যা বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ক্রয়ক্ষমতা বা পারচেজিং পাওয়ার হিসাব করলে আমরা বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আর জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম বৃহত্তম। আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ অনুযায়ী আমাদের শ্রমশক্তি বা লেবার ফোর্স হলো ৬ কোটি ৫০ লাখ।


অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা মাত্র ২১ লাখ ৩৬ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও যে হারটি ৬ শতাংশের বেশি। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো তুলনা করাই ঠিক নয়। তার পরও উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিজন মানুষের হাতে গড়ে ৩ দশমিক ৮টি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। পুরো পৃথিবীর ২৮০ কোটি ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছে ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ আমরা সহজেই বুঝতে পারছি, আমাদের অর্থনীতি ও জনসংখ্যার বিচারে ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা খুবই নগণ্য।


এখন কথা হচ্ছে এ সংখ্যা কেন এত কম। প্রথমত, ক্রেডিট কার্ডকে আমরা এখনো লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবেই দেখছি; অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনযাপনের অপরিহার্য পণ্য হিসেবে একে দেখাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফলে বড় এক অংশের মানুষের কাছে ক্রেডিট কার্ড এখনো একটি ভীতি হিসেবেই কাজ করছে। দ্বিতীয়ত, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে গ্রাহকদের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে, যার ফলে কার্ডের প্রতি আগ্রহের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় ক্রেডিট স্কোরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকগুলো সহজেই ক্রেডিট কার্ড দিতে পারে না। তবে আমি বলব, ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণ করতে না পারা একটি যৌথ ব্যর্থতা।


সীমিত বাজারের মধ্যেও সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড এতটা জনপ্রিয় হলো কীভাবে?


বাংলাদেশে সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের এত জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো আমেরিকান এক্সপ্রেসের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের সম্পৃক্ততা। ২০০৯ সাল থেকে সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স কার্ড ইস্যুইং এবং একুয়ারিং শুরু করে। বলা বাহুল্য যে এর পর থেকেই এ কার্ডের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে আমরা দেশের প্রথম ব্যাংক হিসাবে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ চালু করি। তার পরই আমরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার শীর্ষস্থান দখল করি, যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারের ৩০ শতাংশ সিটি ব্যাংক একাই নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা গ্রাহকদের চাহিদাকে সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। গ্রাহক চাহিদার কথা মনে রেখেই আমরা আমাদের ক্রেডিট কার্ডের ভ্যালু প্রপোজিশন নিয়মিত আপডেট করে থাকি। ব্যতিক্রমধর্মী গ্রাহক সেবা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। সিটি ব্যাংকের দেশব্যাপী ১৩২টি শাখার পাশাপাশি ৬টি ডেডিকেটেড আমেরিকান এক্সপ্রেস সার্ভিস সেন্টার দিয়েও আমরা গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ ২৬টি শাখায় আমরা কার্ড অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছি, যাদের প্রধান কাজই হলো কার্ডের সেবা প্রদান করা।


ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য সিটি ব্যাংকের রয়েছে সর্বাধুনিক অল্টারনেট ডেলিভারি চ্যানেল, যেমন সিটিটাচ ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপ, ২৪/৭ কল সেন্টার সেবা, এসআইভিআর সেবা, অনলাইন সার্ভিস পোর্টালসহ আরো অনেক কিছু। বাজারে সিটি ব্যাংকের প্রায় ৩৪ হাজার পিওএস মেশিন রয়েছে, যা দিয়ে আমরা আমাদের ওয়াইড মার্চেন্ট অ্যাকসেপটেন্স নিশ্চিত করছি। মোটকথা প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ব্র্যান্ড লয়ালটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের গ্রাহকরাই এখন ক্রেডিট কার্ডের ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কাজ করছেন। অর্থাৎ, গ্রাহকরা হলো আমাদের কার্ড ব্যবসার জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় অংশীদার।


ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা কী দেখছেন?


আমরা যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখি, তাহলে দেখা যাবে ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি-জুলাই এ সাত মাসে ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ শতাংশ। কিন্তু পরবর্তী সাত মাসে অর্থাৎ গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গত বছরের বাজেটে ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এর পর থেকে দেশে ক্রেডিট কার্ডের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। আগে একজন গ্রাহক শুধু ই-টিন সনদ দিয়েই ক্রেডিট কার্ড নেয়ার জন্য আবেদন করতে পারতেন, সে সুযোগ এখন আর নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী,  বাংলাদেশের ৭৫-৮০ লাখ টিআইএনগ্রহীতা থাকলেও রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২৫-৩০ লাখ মানুষ। অর্থাৎ, ক্রেডিট কার্ড নেয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৮০ লাখ থেকে ২৫-৩০ লাখে নেমে এসেছে। আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা ক্রেডিট কার্ডের বাজার সম্প্রসারণে এখন প্রধান প্রতিবন্ধক। এছাড়া অতিরিক্ত প্রতিযোগিতাও কার্ডের বাজারে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বিকাশ, নগদের মতো এমএফএসগুলোও অন্য চেহারায় ক্যাশলেস সমাজ গড়ছে।


শর্তের বেড়াজালের কারণে সাধারণ গ্রাহক ক্রেডিট কার্ড নিতে ভয় পান বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ভয় কাটানোর জন্য ব্যাংকগুলো কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে?


শর্তের বেড়াজাল বলে আসলে তেমন কিছু নেই। গ্রাহকরা যখন আবেদন করেন তখন সব শর্ত জেনেই আবেদন করেন। এমন কোনো শর্ত নেই যা ব্যাংক গ্রাহককে অবগত করে না। গ্রাহক যদি বুঝেশুনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন এবং নিয়মিত কার্ডের দেনা শোধ করেন, তাহলে ক্রেডিট কার্ড থেকে অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারেন। যেমন ৪৫ দিন পর্যন্ত সুদবিহীন ক্রেডিট সুবিধা, ক্যাশব্যাক সুবিধা, রিওয়ার্ড পয়েন্ট সুবিধা, ডিসকাউন্ট সুবিধা, এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা, ফাইভ স্টার হোটেলে বাই ওয়ান গেট ওয়ান সুবিধা, শূন্য সুদে ইএমআই সুবিধা ইত্যাদি।

গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

গ্রাহক বাড়াতে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের কার্ডের সুবিধাগুলো আপডেট করছি। নতুন সেগমেন্ট খুঁজে তাদের টার্গেট করছি। নতুন প্রডাক্ট বাজারে আনছি, মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক বাড়াচ্ছি, কিউআর এবং এনএফসি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করছি। মোটকথা গ্রাহক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে আগে যাওয়া হয়নি এমন নতুন বাজারে যাচ্ছি। মফস্বল শহরেও আমরা ক্রেডিট কার্ডের সম্প্রসারণ ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামবাংলার মানুষের জন্য ক্রেডিট কার্ড চালু করা হচ্ছে।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য আপনাদের অফার সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রতি বছরের মতো এবারো আমরা রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার নিয়ে এসেছি। আমরা এবার প্রায় সব ক্যাটাগরিতেই অফার দিচ্ছি। এর মধ্যে প্রধান ক্যাটাগরিগুলো হলো ডাইনিং, ট্রাভেল, গ্রোসারি, লাইফস্টাইল, জুয়েলারি, অনলাইন শপিং ইত্যাদি। অফারগুলোর মধ্যে রয়েছে সেভিংস অফার, ক্যাশব্যাক, এক্সিলারেটেড এম আর পয়েন্ট, বাই ওয়ান গেট ওয়ান। সিটি ব্যাংকের কার্ডসংক্রান্ত সব তথ্য www.cbl.fyi/r23 সাইট থেকে জানা যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই