বাবার দেওয়া জমি ফেরত পাবেন যেভাবে—জেনে নিন সম্পত্তি ফেরানোর আইনি নিয়ম - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

বাবার দেওয়া জমি ফেরত পাবেন যেভাবে—জেনে নিন সম্পত্তি ফেরানোর আইনি নিয়ম

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বাবার দেওয়া জমি ফেরত পাবেন যেভাবে—জেনে নিন সম্পত্তি ফেরানোর আইনি নিয়ম



নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের অন্যতম বড় কারণ হলো—বাবা বা মা জীবিত অবস্থায় এক বা একাধিক সন্তানকে বাড়তি জমি দিয়ে যাওয়া, কিংবা সব কিছুই এক সন্তানের নামে করে দেওয়া। এতে অনেক সময় অন্য উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত হন। প্রশ্ন হলো—এটি কি আইনসম্মত? আর বঞ্চিত সন্তানের করণীয় কী?

চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক জমি ফেরত পাওয়ার আইনি পথ ও করণীয়গুলো—


 ১. পিতা মৃত্যুর আগে যদি ‘ওসিয়ত’ করেন

ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে একজন মুসলিম মৃত্যুর আগে সর্বোচ্চ ১/৩ অংশ সম্পত্তি ওসিয়ত করতে পারেন।

  • যদি ১/৩–এর বেশি অংশ ওসিয়ত করা হয়, তাহলে অন্য ওয়ারিশদের লিখিত সম্মতি প্রয়োজন।

  • সম্মতি না থাকলে সেই ওসিয়ত অবৈধ (invalid) হিসেবে গণ্য হতে পারে।

  • কেউ বঞ্চিত হলে আদালতে ওসিয়ত বাতিলের আবেদন করতে পারেন।


 ২. সাদা কাগজ বা অরেজিস্টার্ড দলিলে সম্পত্তি হস্তান্তর

অনেক সময় পিতা শুধু সাদা কাগজ বা স্ট্যাম্প পেপারে লিখে জমি দিয়ে যান।
কিন্তু মনে রাখতে হবে—
 এই ধরনের দলিল আইনগত মালিকানা তৈরি করে না।
 এটি আদালতে সহজেই চ্যালেঞ্জ করে বাতিল করা যায়।


 ৩. খতিয়ানে নাম থাকলেই কি মালিক হওয়া যায়?

জমির রেকর্ড বা খতিয়ানে কারও নাম থাকলেই তিনি প্রকৃত মালিক নন।
এটি শুধু প্রাথমিক প্রমাণ (Prima Facie Evidence)
অন্য ওয়ারিশরা চাইলে বাটোয়ারা (Partition Case) করে নিজের অংশ বুঝে নিতে পারেন।


 ৪. যদি পিতা হেবা (দান) বা বিক্রয় করে দেন

রেজিস্ট্রার অফিসে হেবা (দান) বা সাবকবলা (বিক্রয়) দলিলের মাধ্যমে জমি দিলে সেটি সাধারণত বৈধ হয়।
তবে সেটির জন্য থাকতে হবে—

  • যথাযথ রেজিস্ট্রেশন,

  • এবং পিতা সেটি করেছেন স্বেচ্ছায় ও জ্ঞানে-সজ্ঞানে।
    প্রয়োজনে আদালত যাচাই করতে পারে, কেউ কি ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে বঞ্চিত করেছে কিনা।


 বঞ্চিত সন্তানের করণীয় ধাপে ধাপে:

 ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করুন — যাতে সব উত্তরাধিকারীর নাম থাকবে।
জমির কাগজপত্র যাচাই করুন — দলিল, রেকর্ড, নামজারি ইত্যাদি।
অভিজ্ঞ সিভিল আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
বাটোয়ারা (partition) বা দলিল বাতিল মামলা দায়ের করুন।
 রায়ের ভিত্তিতে রেকর্ড সংশোধন ও নামজারি সম্পন্ন করুন।


 গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

 সাদা কাগজ বা মৌখিক চুক্তির ওপর ভরসা করবেন না।
ভয়ভীতি বা প্রতারণায় সই করা কাগজ বাতিলযোগ্য।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
 নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হন।


বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

“অনেক সময় পরিবারে ভালোবাসা বা বিশ্বাসের কারণে সঠিক দলিল ছাড়াই জমি দিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আইন তা স্বীকৃতি দেয় না। তাই প্রতিটি সম্পত্তি হস্তান্তর অবশ্যই রেজিস্ট্রি করা উচিত।”

কোন মন্তব্য নেই