মৌলভিত্তির শেয়ারকে টক্কর দিচ্ছে দুর্বল কোম্পানি
টানা উত্থানের পর সম্প্রতি পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। বেশিরভাগ দিন সূচক নিম্নমুখী থাকার পাশাপাশি কমছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। তবে এই সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুর্বল এবং ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ার। কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে এসব শেয়ারদর।
এদিকে দর বাড়লে এর বিশেষ কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। যদিও দুর্বল কিছু কোম্পানির পরিচালন পর্ষদ পুনর্গঠনের খবরে বাড়ছে এসব শেয়ারে ঝুঁকে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তবে বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে কোম্পানিতে নতুন পর্ষদ আসলেই এর আর্থিক অবস্থা পাল্টে যাবে এমন ভাবা বোকামি।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। কারণ এসব কোম্পানি আর্থিক ভিত্তি অনেক দুর্বল। কিন্তু প্রায় সারা বছরই অতিমূল্যায়িত থাকে এসব কোম্পানির শেয়ার। এর মূল কারণ হচ্ছে এই ধরনের কোম্পানিতে কারসাজি বেশি হয়। বিশেষ করে যেসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম সেসব কোম্পানি নিয়ে কারসাজি বেশি হয়। কারণ অল্প শেয়ার থাকলে কারসাজিকারী অল্প মূলধন বিনিয়োগ করে কারসাজি করতে পারে। তারা কৌশলে শেয়ারদর বাড়িয়ে পরে তা বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বেরিয়ে যায়। সর্বশেষে এর লোকসানের দায়ভার নিতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।
সম্প্রতি দেখা যায়, দুর্বল এবং অভিহিত মূল্যের নিচে দর রয়েছে এসব শেয়ারের চাহিদা বেশি। বেশিরভাগ সময়েই এসব শেয়ারে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা বেশি থাকে। যে কারণে এসব শেয়ারের দরও বেশি থাকে। এই তালিকায় ইমাম বাটন, মেঘনা পিইটি, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল, তুংহাই নিটিং, ফ্যামিলি টেক্স, জেনারেশন নেক্সট, জুট স্পিনার্স, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার, এপেক্স ফুডস, এইচ আর টেক্সটাইল, ইভেন্স টেক্সটাইল এবং ফারইস্ট নিটিংসহ আরও কিছু কোম্পানি।
জানতে চাইলে ডিএসইর একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, বাজারে প্রায় এ ধরনের কোম্পানির দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। এর কারণ কারসাজিকারীরা এ সময় বাজার থেকে সুবিধা নিতে চাই। তাই বিনিয়োগকারীদের এ বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসব কথায় কর্নপাত করেন না। শুধু যখন লোকসানে পড়েন তখনই ভুলের কথা মনে পড়ে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবার আগে দেখা উচিত সেই কোম্পানি আর্থিক ভিত্তি কতটা শক্তিশালী। কোম্পানির বোর্ডে কে আছেন সেটা বিষয় নয়।
এদিকে দুর্বল এব ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির বিষয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এসব কোম্পানিকে প্রায় সতর্ক করছে তারা। কিন্তু এতে টনক নড়েনি বিনিয়োগকারীদের। এখনও প্রতিনিয়ত বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ারদর। মূলত গুজবের কারণেই এসব কোম্পানিতে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
এর আগে গত বছর দুর্বল ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়। তালিকাচ্যুতির ঝুঁকিতে ছিল এসব কোম্পানি। এগুলো হচ্ছেÑইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জুট স্পিনার্স, ইমাম বাটন, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, সাভার রিফ্রেক্টরিজ, দুলামিয়া কটন, সমতা লেদার, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিল বাংলা সুগার মিলস, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও কে অ্যান্ড কিউ। সম্প্রতি ঘুরে-ফিরে আবার এসব কোম্পানির শেয়ারদরই বাড়ছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে বিভন্ন গুজব থাকে। গুজবের বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। গুজবে কান না দিয়ে তাদের উচিত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করা। তারা যদি এভাবে কোম্পানি বাছাই করে বিনিয়োগ করেন তাহলে তাদের ঝুঁকির মাত্র কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে বিএসইসি এখন বাজার নিয়ে অনেক কাজ করছে। কোনো কোম্পানির লেনদেন সন্দেহজনক হলে তারা নিশ্চয় ব্যবস্থা নিবেন।’

কোন মন্তব্য নেই