ইতিহাসের ভয়ঙ্কর রেলপথ ‘ডেথ রেলওয়ে’: যেখানে প্রতি কিলোমিটারে মরেছিল ২৯ জন মানুষ - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

ইতিহাসের ভয়ঙ্কর রেলপথ ‘ডেথ রেলওয়ে’: যেখানে প্রতি কিলোমিটারে মরেছিল ২৯ জন মানুষ

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

 ইতিহাসের ভয়ঙ্কর রেলপথ ‘ডেথ রেলওয়ে’: যেখানে প্রতি কিলোমিটারে মরেছিল ২৯ জন মানুষ




থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ‘ডেথ রেলওয়ে’র নাম শুনেছেন? প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্যের মাঝেও লুকিয়ে আছে এক বিভীষিকাময় ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের নির্মিত এই রেলপথ মানবসভ্যতার সবচেয়ে নির্মম শ্রম-নির্যাতনের সাক্ষী।

৪১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইন তৈরির সময় প্রতি কিলোমিটারে প্রায় ২৯ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, যা ইতিহাসে একে সবচেয়ে কুখ্যাত রেলপথে পরিণত করেছে।

এই রেললাইনটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করে। ব্যাংকক থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে রাতচাবুরির নং প্লাডুক জংশন স্টেশন থেকে শুরু হয়েছিল ‘ডেথ রেলওয়ে’।

জাপানিদের কাছে বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্থলপথে যোগাযোগের সুবিধা চেয়ে সমুদ্রপথের বিকল্প হিসেবে এই রেলপথ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়, কারণ মিত্রশক্তির হামলায় সমুদ্রপথ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল।

১৯৪২ সালে জাপানের হাতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মিত্রবাহিনীর যুদ্ধবন্দি এবং ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি সাধারণ নাগরিক, যার মধ্যে শিশুরাও ছিল, বন্দি হয়। তাদেরই দিয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যে এই রেললাইন তৈরি করানো হয়।

প্রতিদিন বন্দিদের ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করানো হতো, খাবার থাকত অল্প পরিমাণে সেদ্ধ ভাত, পচা মাছ বা মাংস। অনেক সময় খাবারে ইঁদুরের বিষ্ঠা পর্যন্ত পাওয়া যেত। বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকেই মারা যান অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায়।

রেলপথ নির্মাণের সময় অমাশয়, ম্যালেরিয়া, কলেরা ও আলসার ছড়িয়ে পড়ে বন্দিশিবিরে। চিকিৎসা না থাকায় প্রতিদিনই অসংখ্য প্রাণ ঝরে যায়।

সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায় ছিল ‘স্পিডো রুল’—১৯৪৩ সালে চালু হওয়া এই নীতির অধীনে বন্দিদের প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। কাজের গতি কম হলে সহ্য করতে হতো অকথ্য নির্যাতন।

‘হেলফায়ার পাস’ নামে রেলপথের একটি অংশ তৈরি করতে গিয়ে ৭০০ বন্দি মারা যান। পুরো প্রকল্পে মৃত্যু হয় অন্তত ১২ হাজার যুদ্ধবন্দির

বর্তমানে এই রেলপথটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। মানুষ আসে এই ‘ডেথ রেলওয়ে’-এর ইতিহাস জানতে—যেখানে প্রতিটি রেল স্লিপারের নিচে লুকিয়ে আছে এক মানবিক ট্র্যাজেডির গল্প।

কোন মন্তব্য নেই