স্কুল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড সঞ্চয়: খুদে শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই বাড়ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

স্কুল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড সঞ্চয়: খুদে শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই বাড়ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

স্কুল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড সঞ্চয়: খুদে শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই বাড়ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি


টাইমস এক্সপ্রেস ২৪

দেশজুড়ে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম এখন নতুন গতিতে এগোচ্ছে। শিক্ষার খরচ মেটানো থেকে শুরু করে নিজের টাকায় কিছু করার স্বপ্ন—খুদে শিক্ষার্থীরাও এখন ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক। আগে যেখানে সঞ্চয়ের মানে ছিল মাটির ব্যাংকে কয়েন জমা, এখন সেই সঞ্চয় দেখা যায় ডিজিটাল স্ক্রিনে ব্যালেন্স হিসেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখ ১৫ হাজার ২৫টি। এর মধ্যে ২৩ লাখ ছেলে ও ২২ লাখের বেশি মেয়ে শিক্ষার্থীর নামে হিসাব খোলা হয়েছে। গ্রামে স্কুল ব্যাংকিংয়ের বিস্তার আরও বড়—২৩ লাখ ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর হিসাব গ্রামাঞ্চলে, আর শহরে ২১ লাখ ২৩ হাজার।

সব মিলিয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা হয়েছে ২ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীদের জমা ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা, আর গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৬৬৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংখ্যায় গ্রাম এগিয়ে থাকলেও সঞ্চয়ের অঙ্কে শহর কিছুটা এগিয়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্যোগটি দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির একটি কার্যকর উদাহরণ। করোনাকালে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখন আবার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা। এর পেছনে প্রধান কারণ ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ। অনেক স্কুলেই এখন ব্যাংক প্রতিনিধি গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সঞ্চয় হিসাব খোলার সুবিধা দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির কোনো জাদুকরি যন্ত্র নেই। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাব নিশ্চিত করা গেলে সেটিই হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠনের ভিত্তি।”

২০১১ সালে মাত্র ১০০ টাকা জমা দিয়ে ১১–১৭ বছর বয়সীদের জন্য শুরু হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। বর্তমানে দেশের ৬১ ব্যাংকের মধ্যে ৫৯টিতেই স্কুল ব্যাংকিং চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ হিসাব বেসরকারি ব্যাংকে, যেখানে শিক্ষার্থীদের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জমা হয়েছে ৩৮০ কোটি টাকা

সবচেয়ে সক্রিয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ডাচ্‌-বাংলা, ইসলামী, অগ্রণী, সোনালী ও রূপালী ব্যাংক। বিশেষ করে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের ডিজিটাল স্কুল ব্যাংকিং সেবা সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর নাগাল পেয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, “স্কুল ব্যাংকিং শুধু সঞ্চয়ের সুযোগ নয়, এটি শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক ধারায় যুক্ত করছে। এতে পরিবার উপকৃত হচ্ছে, আর ব্যাংক পাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের ভিত্তি।”

অন্যদিকে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান বলেন, “স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিশুরা এখন থেকেই টাকা ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখছে। এতে তারা সঞ্চয়ের পাশাপাশি শিক্ষাবিমা, বৃত্তি ও স্কুল ফি প্রদানের সুবিধাও পাচ্ছে।”

মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র আইমান জানায়, “উৎসবে পাওয়া টাকা আর টিফিনের কিছু অংশ ব্যাংকে রাখি। পরীক্ষার সময় সেই টাকা তুলে খরচ করেছি। এতে বাবার ওপর চাপ পড়েনি।”

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণে কাজ করছে। চলতি বছরের মার্চে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংকের শাখা অন্তত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করবে। এতে দেশের চার লাখের বেশি স্কুল আর্থিক শিক্ষার বাস্তব ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “এই উদ্যোগে সবাই লাভবান—শিক্ষার্থীরা সঞ্চয় করছে, অভিভাবক স্বস্তি পাচ্ছেন, ব্যাংকও আমানত বাড়াচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে খুদে শিক্ষার্থীরাও এখন অবদান রাখছে।”

কোন মন্তব্য নেই