দুর্নীতি ও অনিয়মে বিপর্যস্ত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত | বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
দুর্নীতি ও অনিয়মে বিপর্যস্ত ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত | বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর পদক্ষেপ
সংবাদ প্রতিবেদন:
নিজস্ব প্রতিবেদক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫
দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাতে (NBFI) অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপির চরম পরিস্থিতির কারণে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে না পারা এবং আর্থিক অনিয়মের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
🔹 দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপিতে চরম অবস্থা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাপক দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যত দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
দেশের ২০টি দুর্বল এনবিএফআইয়ের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘অতি দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রাতিষ্ঠানিক আমানত আটকে আছে।
🔹 বন্ধ হতে যাওয়া ৯টি এনবিএফআই ও তাদের অবস্থা
১️⃣ এফএএস ফাইন্যান্স: ঋণ খেলাপি ৯৯.৯৩%, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা।
২️⃣ ফারইস্ট ফাইন্যান্স: ঋণ খেলাপি ৯৮%, লোকসান ১,০১৭ কোটি টাকা।
৩️⃣ বিআইএফসি: ঋণ খেলাপি ৯৭.৩০%, লোকসান ১,৪৮০ কোটি টাকা।
৪️⃣ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: ঋণ খেলাপি ৯৬%, লোকসান ৪,২১৯ কোটি টাকা।
৫️⃣ পিপলস লিজিং: ঋণ খেলাপি ৯৫%, লোকসান ৪,৬২৮ কোটি টাকা।
৬️⃣ আভিভা ফাইন্যান্স: ঋণ খেলাপি ৮৩%, লোকসান ৩,৮০৩ কোটি টাকা।
৭️⃣ প্রিমিয়ার লিজিং: ঋণ খেলাপি ৭৫%, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা।
৮️⃣ জিএসপি ফাইন্যান্স: ঋণ খেলাপি ৫৯%, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা।
৯️⃣ প্রাইম ফাইন্যান্স: ঋণ খেলাপি ৭৮%, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
🔹 ব্যাংকগুলোর আমানত সংকট
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্বল ৫টি মার্জারপ্রাপ্ত ব্যাংকের কাছে রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (FDR)। এর মধ্যে:
-
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১০,১৮৫ কোটি টাকা
-
ইউনিয়ন ব্যাংক: ৮,৬৩১ কোটি টাকা
-
এক্সিম ব্যাংক: ৮,১৫৭ কোটি টাকা
-
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৫,৭৯১ কোটি টাকা
-
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৪,৫৬৮ কোটি টাকা
এছাড়া পদ্মা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ আমানত আটকে আছে।
🔹 রাজনৈতিক প্রভাব ও কমিশন বাণিজ্য
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান বলেন,
“শুধু কমিশন বাণিজ্য নয়, রাজনৈতিক প্রভাব এবং উচ্চ সুদের লোভে এসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পথে গেছে। তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও এস আলম গ্রুপের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল।”
🔹 বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন,
“প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় টাকা রাখবে তা তাদের নিজস্ব নীতি। কিন্তু মূল সমস্যা দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাব। এগুলো বন্ধ না হলে আর্থিক খাত স্থিতিশীল করা কঠিন হবে।”
🔹 বিশ্লেষকদের অভিমত
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ আর্থিক খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও গ্রাহক আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে তদারকি ও পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই