অনলাইন প্রলোভন ও ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে প্রতারণা: বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
অনলাইন প্রলোভন ও ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে প্রতারণা: বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে সম্পর্ক গড়া, প্রলোভন দেখানো ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছদ্মনাম ব্যবহার করে বন্ধুত্ব, প্রেমের অভিনয়, আর্থিক প্রতারণা ও শারীরিক নির্যাতনের মতো ঘটনার সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক ও মানসিক সহিংসতা।
একের পর এক প্রতারণার অভিযোগ
সম্প্রতি ভোলায় মুসলিম পরিচয় ব্যবহার করে এক তরুণের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুরে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে নির্যাতনের ঘটনাও আলোচনায় এসেছে। বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর বিকৃত মন্তব্য নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
অন্যদিকে, টঙ্গী থেকে এক মসজিদের খতিবকে অপহরণের পর পঞ্চগড়ে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি দাবি করেছেন, ধর্মীয় বক্তব্যে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করায় তাঁকে হুমকি ও নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা সামাজিক অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় বিভাজন ও অনলাইন হয়রানির একটি বিকৃত রূপ। সম্পর্কের নামে প্রতারণা বা নির্যাতন কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর বিষয় নয়—এটি মূলত অপরাধ, যার শিকার হচ্ছেন অনেক নারী ও কিশোরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে প্রতারণা করা কেবল আইন লঙ্ঘন নয়, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনও। সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।”
নারী সুরক্ষায় সচেতনতা জরুরি
বিশ্লেষকদের মতে, অনলাইন সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব গড়ার আগে পারস্পরিক পরিচয় যাচাই করা, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি শেয়ার না করা এবং সন্দেহজনক আচরণ দেখলে দ্রুত পুলিশের সাইবার ইউনিটে অভিযোগ জানানো উচিত।
নারী অধিকার কর্মীরা বলেন, “ধর্ম, জাতি বা সংস্কৃতি নির্বিশেষে—নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের ভূমিকা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
উপসংহার
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো সমাজে নারী নিরাপত্তা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধী যেই হোক না কেন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও আইনের কঠোর প্রয়োগই হতে পারে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের একমাত্র পথ।
কোন মন্তব্য নেই