সংকট না থাকলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মজুত করায় চালের দাম বেড়েছে - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

সংকট না থাকলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা মজুত করায় চালের দাম বেড়েছে

 


সংকট না থাকলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মজুদের কারণে বাজারে চালের দাম বেড়েছে। গতকাল নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত চালের মূল্য বৃদ্ধি কার লাভ কার ক্ষতি সংলাপে অধিকাংশ বক্তা এমন বক্তব্য রেখেছেন। এর বাইরে বক্তারা চালের চাহিদার হিসাবে গড়মিল, সময় মতো চাল সংরক্ষণ না হওয়া ও আমদানি করার সিদ্ধান্ত দেরিতে নেয়ায় বাজার অস্থির ও চলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ মনে করছেন।


ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি শাহাজাহান জানান, আগের কয়েক বছর ধানের দাম অনেক কম ছিল। এমনও হয়েছে কৃষকরা ক্ষেতের ধান কাটতেই অস্বীকার করছিল। ওই সময়েও বাজারে চালের দাম কমেনি। এবারের বাজারে চালের কোন সংকট নেই। আম্ফান ও বন্যায় ১৫ লাখ টন ধান উৎপাদন কম হলেও দেশে চাল ২৯ থেকে ৩০ লাখ টন বেশি রয়েছে। তিনি হিসাব দিয়ে বলেন, গত বোরো ও আউশ উৎপাদন বাম্পার হয়েছে। ২ কোটি ১ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এরমধ্যে আউশ ৩৩ লাখ টন। আমনের চূড়ান্ত হিসাব এখনো আসেনি তবে সেখানেও খুব একটা ঘাটতি হবে না।


এই চালের ২৬ শতাংশ আমরা নন হিউম্যান ফুড হিসাবে ধরেছি। তারপরেও দেশে খাদ্য সংকটের কোন আশংকা নেই। আগামীতে ৫০ টাকা কেজির নিচেই থাকবে চাল। তিনি বলেন, এক শ্রেণির মৌসুমী ব্যবসায়ী চাল ধরে রেখে চালের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কৃষকরা এবছর ধান বিক্রি করে ভাল মূল্য পেয়েছে। সাইখ সিরাজ বলেন, চালের চাহিদা কত তা নিয়ে তথ্যের গড়মিল রয়েছে। তিনি আমদানিকারক আরো বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। আমদানি করা চালের মূল্যের বিষয়ে বলেন, বাজারে আমদানি করা চালের দাম পড়বে ৪০ টাকা কেজি। বর্তমানে ২৯ জনকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করারও প্রস্তাব করেন।


আমদানিকারক শাহ আলম বাবু বলেন, দেশে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টন সুগন্ধি চাল উৎপাদন হয়। তিনি সুগন্ধি চাল রপ্তানির আরো বেশি সুযোগ দিয়ে মোটা চাল আমদানির কথা বলেন। গবেষক ড. মির্জ্জা মোফাজ্জল বলেন, অনেকে বলছেন আমাদের ধানের উৎপাদনশীলতা আর বৃদ্ধি করা সম্ভব নয় এটি ঠিক নয়। তিনি বলেন ধানের উৎপাদনশীলতা এখনো ৮ থেকে ১০ গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রতি বিঘায় ফলন আগাশীতে ১০ টনে নিয়ে যেতে পারবো। দেশে ছোট ছোট চাল কলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ তারা বড় চাল কলের সঙ্গে পারছে না। বড় কলগুলো মোটা চাল চিকন করে বাজারে ছাড়ছে। এটাও চাল সংকটের আরো একটি কারণ।


রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কেএম খোরশেদুল আলম বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মিলাররা চাল সরবরাহ করতে পারছে না। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। তা ছাড়া বাজারে শুধু মিলাররাই নেই। ১৭টি মেগা কোম্পানি এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তার চাল দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করছে। তারা চাল সংরক্ষণ করে রাখছে। তাদের বাংলাদেশ ব্যাংক এসব কাজে বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে। আর মিলাররা ঋণ করছে ১৭ শতাংশ সুদে। নতুন মেগা ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যেই নিয়ে গেছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ আসাদুজ্জামান বলেন, চালের দাম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর পরে বেড়েছে ৫০ শতাংশ। কিন্তু সরকার এসব বিষয়ে কোন দৃষ্টি দেয়নি। করোনার কারণে সরকারের চালের মজুদ কমেছে। এখন ৫ লাখ টন মজুদ রয়েছে। গত বছর যা ছিল ১২ লাখ টন। সুতরাং ব্যবসায়ীদের কাছে মেসেজ গেছে চালের সংকটের। তারা চাল সংরক্ষণ করে রেখেছে।

কোন মন্তব্য নেই