স্বাধীনতার পরও ধনবৈষম্য বেড়েছে: বুর্জোয়া শাসনের ধারাবাহিকতায় বাস্তবতার বিশ্লেষণ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর
স্বাধীনতার পরও ধনবৈষম্য বেড়েছে: বুর্জোয়া শাসনের ধারাবাহিকতায় বাস্তবতার বিশ্লেষণ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর
নিজস্ব প্রতিবেদক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ৭:৩১
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও শ্রেণিবৈষম্যের মূল সংকট এখনো সমাধান হয়নি— বরং ধনবৈষম্য আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, স্বাধীনতার পর যে বুর্জোয়া শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে, তারা আগের শাসকদের মতোই পুঁজিবাদী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে, যার ফলেই সমাজে বৈষম্য দিন দিন গভীর হয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশে শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির সম্পর্কের সমস্যা সমাধান হয়নি; বরং ধনবৈষম্য আগের চেয়ে বেড়েছে। কারণ, পুঁজিবাদী উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে— যা বৈষম্য সৃষ্টি করতেই বাধ্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী রাজনীতি ও নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদ প্রাধান্য পেলেও সমাজতন্ত্রের বাস্তব প্রয়োগ ঘটেনি। সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তার সঙ্গে যুক্ত জাতীয়তাবাদের মিশ্রণ প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক পরিবর্তনকে দুর্বল করেছে।
চৌধুরী আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর বামপন্থীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক বিভাজন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে বুর্জোয়া শ্রেণি, যারা পুঁজির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।”
তাঁর মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পুঁজিবাদী কাঠামোর ওপর দাঁড়ানো। ফলে সামগ্রিক জাতীয় প্রবৃদ্ধি যতই বাড়ুক না কেন, তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় না। “পুঁজিবাদী উন্নয়ন মানেই ধনীদের আরও ধনী হওয়া, আর গরিবদের আরও প্রান্তিক হওয়া,” যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শ্রেণিসংগ্রামের প্রশ্নে বাস্তব কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। বরং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে শাসক শ্রেণির আধিপত্যই টিকে আছে।”
চৌধুরীর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্বাধীনতার সময়কার স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি মূলত বুর্জোয়া নেতৃত্বের প্রভাব ও শ্রেণিচেতনার অভাবে।
মূল বক্তব্যসমূহ:
-
স্বাধীনতার পরও শ্রেণি-সংগ্রামের সমাধান হয়নি।
-
ধনবৈষম্য বেড়েছে পুঁজিবাদী উন্নয়ন ধারার কারণে।
-
বামপন্থীদের বিভাজন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুর্বল করেছে।
-
রাষ্ট্রক্ষমতায় বুর্জোয়া শ্রেণির আধিপত্য অব্যাহত।
-
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ।

কোন মন্তব্য নেই