সি চিন পিংয়ের পর চীনের নেতৃত্বে কে? উত্তরসূরি নিয়েই অনিশ্চয়তা বাড়ছে বেইজিংয়ে
সি চিন পিংয়ের পর চীনের নেতৃত্বে কে? উত্তরসূরি নিয়েই অনিশ্চয়তা বাড়ছে বেইজিংয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার
বেইজিংয়ে চলমান চীনের শীর্ষ নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কৌশলগত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। তবে আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে ঘুরছে এমন এক প্রশ্ন, যা দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে— সি চিন পিংয়ের পর চীনের নেতৃত্বে আসবেন কে?
টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। মাও সে–তুংয়ের পর তিনিই সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে চীনের রাজনীতিতে অবস্থান নিয়েছেন। তবুও এখনো পর্যন্ত তিনি কোনো উত্তরসূরি মনোনীত করেননি কিংবা সময়সূচি দেননি, যা ক্ষমতার উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সি চিন পিংয়ের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। নতুন নেতা যদি তাঁর কঠোর নীতির ধারাবাহিকতা বজায় না রাখেন, তবে চীনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
সি চিন পিং বর্তমানে এক জটিল অবস্থায় আছেন— উত্তরসূরি নির্ধারণ মানে এক নতুন ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা নিজের প্রভাবকে দুর্বল করতে পারে। কিন্তু বিলম্ব করলে উত্তরাধিকার ও দলীয় ঐক্য দুই–ই হুমকিতে পড়তে পারে।
৭২ বছর বয়সী সি চিন পিং একাধিকবার বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূল কারণ ছিল ‘ভুল উত্তরসূরি বাছাই’। তিনি মনে করেন, গর্বাচেভকে মনোনয়ন দিয়েই সোভিয়েত নেতৃত্ব নিজেদের পতন ডেকে এনেছিল।
গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর নয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে বহিষ্কারও সেই বার্তারই পুনরাবৃত্তি— সির চোখে আনুগত্যহীনতার প্রতি শূন্য সহনশীলতা।
চীনের উত্তরাধিকার সংকট আরও গভীর হচ্ছে, কারণ পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সব সদস্যই এখন ষাটোর্ধ্ব। তাই তাঁদের কারও উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিশ্লেষকদের ধারণা, সি চিন পিংয়ের উত্তরসূরি হতে পারেন ১৯৭০–এর দশকে জন্ম নেওয়া কোনো তরুণ কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে প্রাদেশিক প্রশাসনে বা কেন্দ্রীয় দপ্তরে দায়িত্বে আছেন।
তবে সি তরুণ নেতৃত্ব নিয়েও সতর্ক। তাঁর ভাষায়, “একটি বাঁধে ছোট ফাটলই ভয়াবহ ধস ডেকে আনতে পারে।”
অধ্যাপক ওয়াং হসিন–হসিয়েন বলেন, “সি অন্যদের প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ নেই। বয়স যত বাড়ছে, তাঁর সঙ্গে সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের প্রজন্মগত দূরত্বও তত বাড়ছে।”
চীনের ইতিহাস বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তরসূরি প্রশ্নটি এখন বেইজিংয়ের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ এটি কেবল একজন নেতার ভবিষ্যৎ নয়, বরং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও জড়িত।
মূল পয়েন্টসমূহ:
-
সি চিন পিং টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায়।
-
এখনো কোনো উত্তরসূরি মনোনয়ন দেননি।
-
পার্টির শীর্ষ পর্যায়ে তরুণ নেতৃত্বের অভাব।
-
বিদেশি কূটনীতিকরা চেয়ে আছেন চলমান বৈঠকের দিকে।
-
২০২৭ সালের আগে বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

কোন মন্তব্য নেই