বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ঝুট বর্জ্যের ভেতর লুকানো কোটি টাকার সম্ভাবনা
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ঝুট বর্জ্যের ভেতর লুকানো কোটি টাকার সম্ভাবনা
টাইমস এক্সপ্রেস ২৪ ডেস্ক:
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প শুধু রপ্তানির খাত নয়, বরং লাখো মানুষের জীবিকার উৎস। এই শিল্পের সাফল্যের পাশাপাশি প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টেক্সটাইল বর্জ্য বা ‘ঝুট’। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঝুট ফেলে না দিয়ে সঠিকভাবে পুনর্ব্যবহার করা গেলে তা হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনাময় শিল্প।
২০২৫ সালে দেশজুড়ে পোশাক কারখানাগুলো থেকে প্রায় ৫ লাখ ৭৭ হাজার টন টেক্সটাইল বর্জ্য তৈরি হয়েছে বলে জানায় Thomson Reuters Foundation, TexSPACE Today এবং The Centre for Child Rights and Business। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ ঝুট টেকসই উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
বিশ্ববাজারে এখন শুধু সস্তা পোশাক নয়, চাওয়া হচ্ছে দায়বদ্ধ ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন। যারা তাদের উৎপাদনে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তাদের পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেয়।
তবে এই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে কিছু বড় বাধা রয়েছে।
প্রথমত, অনেক কারখানায় এখনো বর্জ্য আলাদা করার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। ভালো মানের ঝুট খারাপের সঙ্গে মিশে গিয়ে মান হারায়।
দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ কারখানা পুরোনো ওপেন-এন্ড স্পিনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা দিয়ে উচ্চমানের পুনর্ব্যবহৃত সুতা তৈরি সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, ঝুটের মালিকানা নিয়ে বিভ্রান্তি ও বাজার অস্থিরতাও বড় প্রতিবন্ধক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গিঁটগুলো খুলতে হলে দরকার নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, এবং কারখানা পর্যায়ে স্বচ্ছতা।
শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কমন রিসাইক্লিং পার্ক স্থাপন ও নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুট ব্যবহারে নতুন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব।
এছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ঋণ ও স্থানীয় ডিজাইনারদের সহযোগিতায় আপসাইকেলড পোশাক উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া গেলে দেশে গড়ে উঠবে নতুন মূল্য সংযোজন ভিত্তিক অর্থনীতি।
শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এসেছে “বর্জ্য নয়, সম্পদ” এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ঝুটকে দেখার। সঠিক নীতি, প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে শুরু হবে নতুন এক টেকসই অর্থনৈতিক অধ্যায়।

কোন মন্তব্য নেই