জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি: কেন তাঁকে বলা হচ্ছে ‘কট্টর রক্ষণশীল’
জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি: কেন তাঁকে বলা হচ্ছে ‘কট্টর রক্ষণশীল’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | টাইমস এক্সপ্রেস ২৪ | প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩০ | আপডেট: ১২:০০
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান এখন অর্থনৈতিক মন্দা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও নিম্ন জন্মহারের মতো সংকটে ভুগছে। এমন জটিল সময়েই দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সানায়ে তাকাইচি।
তাকে জাপানের রাজনীতিতে ‘লৌহ মনোবলের নারী’ বলা হয়। তবে একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক মহলে তিনি পরিচিত একজন ‘কট্টর রক্ষণশীল’ হিসেবে।
টিভি উপস্থাপক থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত
রাজনীতিতে আসার আগে সানায়ে তাকাইচি ছিলেন টেলিভিশন উপস্থাপিকা এবং একটি হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার। ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র–জাপান বাণিজ্য বিরোধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে কংগ্রেসওম্যান প্যাট্রিসিয়া শ্রোডারের দপ্তরে কাজ করার সময় থেকেই তিনি রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত হন।
১৯৯২ সালে প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়লেও পরাজিত হন। তবে ১৯৯৬ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)–র হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এরপর টানা ১০ বার জয়ী হন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাপান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন—অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে।
তিনবারের প্রচেষ্টায় জয়
২০২১ সালে তিনি প্রথমবার এলডিপি নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করেন, কিন্তু ফুমিও কিশিদার কাছে হেরে যান। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ হন। অবশেষে ২০২৫ সালে তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় তিনি জয়ী হয়ে জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: ‘আবেনোমিক্স’-এর পুনরুত্থান
তাকাইচি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের অর্থনৈতিক নীতি ‘আবেনোমিক্স’–এর অনুসারী। তিনি উচ্চ ব্যয় ও নিম্ন সুদের নীতির মাধ্যমে জাপানের স্থবির অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চান।
কেন তাঁকে ‘কট্টর রক্ষণশীল’ বলা হয়
সানায়ে তাকাইচি সামাজিক ও সাংবিধানিক বিষয়ে দৃঢ় রক্ষণশীল অবস্থানের জন্য পরিচিত।
-
তিনি বিবাহিত নারীদের কুমারী নাম রাখার আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁর মতে, এটি জাপানের ঐতিহ্যের পরিপন্থী।
-
তিনি বিতর্কিত ইয়াসুকুনি মন্দিরের নিয়মিত দর্শনার্থী, যেখানে জাপানের যুদ্ধাপরাধীদেরও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
-
তিনি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর ওপর সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা শিথিল করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন, যাতে দেশটির প্রতিরক্ষা ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়।
সামনে চ্যালেঞ্জ
এখন তাকাইচির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাপানের ভূমিকাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, রক্ষণশীল হলেও সানায়ে তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান একটি নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই