মেট্রোর পিলারে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস: গুম-খুন-নিপীড়নের চিত্রে প্রতিরোধের গল্প - TIMES EXPRESS | টাইমস এক্সপ্রেস is an interactive news portal

নিউজ ফাস্ট

মেট্রোর পিলারে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস: গুম-খুন-নিপীড়নের চিত্রে প্রতিরোধের গল্প

 

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

মেট্রোর পিলারে ফ্যাসিবাদের ইতিহাস: গুম-খুন-নিপীড়নের চিত্রে প্রতিরোধের গল্প



নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক ধরে যাঁরা হাঁটেন বা মেট্রোরেলে ওঠেন, তাঁদের চোখে এখন ধরা দিচ্ছে এক ভিন্ন দৃশ্য—চিত্রের মাধ্যমে ইতিহাস। কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত মেট্রোরেলের পিলারজুড়ে আঁকা হয়েছে বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলের গুম, খুন, নির্যাতন ও নিপীড়নের নির্মম কাহিনি।

ফিরে দেখা ফ্যাসিস্ট রেজিম’ শিরোনামে আঁকা এই গ্রাফিতিগুলো যেন অতীতের নিষ্ঠুর সময়কে চোখের সামনে জীবন্ত করে তুলেছে। একেকটি পিলার একেকটি ঘটনার সাক্ষী।

কারওয়ান বাজার স্টেশন থেকে শুরু হওয়া এই চিত্রায়নে স্থান পেয়েছে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাপ্রবাহ—যার মধ্যে আছে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, নিমতলী অগ্নিকাণ্ড, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, ফেলানী হত্যা, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, বিশ্বজিৎ দাস হত্যা প্রভৃতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন,

“শিল্পকলা এখন প্রতিবাদের শক্তিশালী ভাষা হয়ে উঠেছে। এই গ্রাফিতিগুলো শুধু চিত্র নয়, এগুলো এক যুগের সত্য ও প্রতিরোধের প্রতীক।”

গ্রাফিতিতে আরও ফুটে উঠেছে ইলিয়াস আলীর গুম, রানা প্লাজা ধস, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, তনু ধর্ষণ, রামপাল আন্দোলন, নাসিরনগর হামলা, হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি, রাতের ভোট, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদ ও মেজর সিনহা হত্যার ঘটনাও।

শেষদিকে পিলারগুলোয় স্থান পেয়েছে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং ‘ফ্যাসিবাদের পতন’-এর প্রতীকী দৃশ্য।

নগরবাসীও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। বেসরকারি চাকরিজীবী আনিসুর রহমান বলেন, “শহরের দেয়ালজুড়ে পোস্টারের বদলে ইতিহাসের ছবি দেখতে ভালো লাগে। হাঁটতে হাঁটতে যেন একটা সংগ্রামী সময়ের গল্প চোখে পড়ে।”

এই ধারণার জনক ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত আগস্টে উদ্বোধনের সময় উপদেষ্টা বলেছিলেন,

“এই গ্রাফিতিগুলো জনগণের সাহসী প্রতিরোধ ও ফ্যাসিবাদের ভয়াল দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দেবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।”

এছাড়া শাহবাগ থেকে পরীবাগ পর্যন্তও আঁকা হয়েছে অভ্যুত্থান ও প্রতিরোধের ইতিহাস। এসব দেয়ালচিত্র এখন শুধু শিল্প নয়, হয়ে উঠেছে এক নির্মম ইতিহাসের ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টেশন—যা স্মরণ করিয়ে দেয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রকৃত মূল্য।

কোন মন্তব্য নেই